পাহাড়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে তাঁত বস্ত্রশিল্প। দক্ষ শ্রমিক ও দেশিও সুতার অভাবের কারণে সৃষ্টি হচ্ছে নানা মুুখি সংকট। নিখুদ তাঁতের বুনন আর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের পোষাকের আদলে তৈরি বাহারি ডিজাইনের তাঁত বস্ত্রের কদরও অনেক। স্থানীয়দের সঙ্গে মনজয় করে নিয়েছে দেশী-বিদেশী পর্যটকদেরও। তাছাড়া দামও সাশ্রয়ী। তাই চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক।
কিন্তু সরবরাহ কম থাকায় গ্রহকদের চাহিদা মিটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁত বস্ত্র ব্যবসায়ীদের। সুতা ও শ্রমিক সংকটে রাঙামাটির অনেক তাঁত কেন্দ্র বন্ধ হওয়ার উপক্রম বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় তাঁতী রূপসি চাকাম জানান, পাহাড়ে এক সময় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারীরা নিজেদের প্রয়োজনে জুমে উৎপাদিত তুলা থেকে চরকায় সুতা কেটে রঙ করে পরে কাপড় বুনতো। রঙ করার জন্য ব্যবহার করা হতো বিভিন্ন ফুল, ফল, পাতা কিংবা গাছের ছাল। এ ভেষজ উপকরণ ব্যবহার করেই সুতার নানা রঙ (লাল, কালো নীল ও হলুদ) করা হতো। তাঁতে তৈরি করা হতো নিজেদের প্রয়োজনীয় পোষাক। কিন্তু কালের পরির্বতনে রাঙামাটিতে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন তাঁত বস্ত্রশিল্প কারখানা। এখন এসব বস্ত্রশিল্প কারখানা পোষাক রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজার ছাড়া দেশের সব স্থানে পাওয়া যায়। রপ্তানি করা হয় বিভিন্ন দেশে। পাহাড়িদের সঙ্গে বাঙালিদেরও মনজয় করে নিয়েছে এসব বাহারি ডিজাইনের পোষাক। কিন্তু রাঙামাটিতে তাঁত বস্ত্রশিল্পের অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও সুতা সংকট ও সঠিক পরিকল্পনা কার্যকর উদ্যোগের অভাবে সম্ভাবনা বাস্তবে রূপায়িত হতে পারছে না।
রাঙামাটি বয়ন টেক্সটাইল সত্বাধিকারী মোঃ জহির উদ্দিন চৌধুরী জানান, দক্ষশ্রমিক ও সুতা সংকটের কারণে উদ্যোক্তাদের তাঁত কেন্দ্র পরিচালনায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। কারণ এক সময় রাঙামাটির ঘাগড়া টেক্সটাইল মিল থেকে সুতা সরবারহ করা হতো। কিন্তু এখন সেখান থেকে স্থানীয় সুতা পাওয়া যায়না। যার কারণে বাইরে থেকে সুতা সরবারহ করতে হচ্ছে আমাদের। তাছাড়া সে সুতাগুলোর মানও ভালোনা। এ বস্ত্রশিল্প রক্ষায় কোন পদক্ষেপ নেই সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের। ফলে হতাশার মধ্যে পড়েছে তাঁত বস্ত্র শিল্পের ব্যবসায়ের সাথে জড়িতরা।
অন্যদিকে তিন পার্বত্য জেলায় তাতী সেবা কেন্দ্র খুলে ন্যায্য মূল্যে সুতা সরবরাহের প্রতিশ্রুতি থাকলেও বিসিক তা পূরণ না করায় সংকট বাড়ছে বলে মনে করেন উদ্যোক্তারা।
এব্যাপর রাঙামাটি ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) সহকারী মহাব্যবস্থাপক মিহির কান্তি মল্লিক জানান, রাঙামাটি টেক্সটাইল মিল পার্বত্যাঞ্চলের সুতার চাহিদা মিটিয়ে বাইরে সুতা বিক্রি করার কথা ছিল। কিন্তু এ টেক্সটাইল মিল স্থানীয়দের চাহিদা অনুযায়ে সুতা তৈরি করেনা। কারণ রাঙামাটি টেক্সটাইল মিল লিষ্ট দিয়ে দিয়েছে (প্রাইভেট সেক্টরে) ব্যক্তি মালিকানাধীন। প্রাইভেট সেক্টর নিজেদের স্বার্থ তারা স্থানীয়দের চাহিদা অনুযায়ি সুতা তৈরি করেনা। স্থানীয় তাঁত বাস্ত্র শিল্প কারখানায় সাধরাণত সুতা প্রয়োজন হয়- ৪২ডাবল, ২০সিঙ্গেল, ৩২সিঙ্গেল, ৪০সিঙ্গেল। এসব সুতা রাঙামাটি টেক্সটাইল মিল কাছে পাওয়া যায়না। তাই সুতা সংকট দেখা দিয়েছে। তবে দক্ষ শ্রমিকের অভাবের বিষয়ে অভিযোগ অস্বীকার করেছে এ কর্মকর্তা। তিনি বলেন বিসিক যতেষ্ট দক্ষশ্রমিক তৈরি করে দিয়েছে। কিন্তু স্থানীয় তাঁত বস্ত্রশিল্পের কতৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনা। তাই হয়তো শ্রমিক সংকট মনে করছে তারা।
উদ্যোক্তাদের দাবি স্থানী তাঁতীদের ন্যায্য মূল্যে সুতা সরবরাহ ব্যবস্থা করে রাঙামাটির তাঁত বস্ত্রশিল্পর অস্থিত পুনরুদ্ধার করতে হবে।
বিডি-প্রতিদিন/ ০৭ মে ১৬/ সালাহ উদ্দীন