ঐতিহ্যবাহী কান্তনগর মন্দির চত্বরে মধ্যরাতে শ্রী শ্রী কান্তজীউ’র (রাধাঁ-কৃষ্ণের) বিগ্রহের রাস উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষ্যে রবিবার শ্রী শ্রী কান্তজিউ বিগ্রহ ধর্মীয় শোভাযাত্রা ও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যদিয়ে রাজবাড়ী হতে কান্তনগর মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয়।
ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব উপলক্ষ্যে কান্তনগর মন্দিরের বিশাল চত্বরজুড়ে দেশের দূরদুরান্ত থেকে আসা পুণ্যার্থীদের পদভারে মন্দির চত্বর মুখরিত হয়ে উঠেছে। রাস উৎসব দর্শনে লক্ষাধিক ভক্ত-পুণ্যার্থী ও দেশী-বিদেশি পর্যটকদের সমাগম ঘটবে বলে দিনাজপুর রাজ দেবোত্তর এস্টেট-এর এজেন্ট শ্রী অমলেন্দু ভৌমিক আশা প্রকাশ করেছেন।
রবিবার সকাল ৯টায় দিনাজপুর রাজবাড়ী মন্দির হতে শত শত নারী-পুরুষ ভক্ত ও পুন্যার্থীদের অংশগ্রহনের মধ্যদিয়ে শ্রী শ্রী কান্তজীউ বিগ্রহ পালকীতে করে পদব্রজে যাত্রা শুরু করে। যাত্রাপথে একজন নারী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ কঠোর নিরাপত্তার বেষ্টনীর মধ্যদিয়ে দুপুরের মধ্যে বিগ্রহ কান্তনগর মন্দিরে পৌঁছে।
দিনাজপুর রাজ দেবোত্তর এস্টেট-এর এজেন্ট অমলেন্দু ভৌমিক জানান, ১৭৫২ খ্রিস্টাব্দে মন্দির প্রতিষ্ঠার পর হতে রাজবংশের পরিবার প্রচলিত চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী শ্রী শ্রী জন্মাষ্টমীর আগের দিন কান্তনগর মন্দির হতে ঢেঁপা নদীপথে নৌ-বহরে শ্রী শ্রী কান্তজিউ বিগ্রহ রাজবাড়ী মন্দিরে নিয়ে আসা হয়। আবার রাস পূর্ণিমার একদিন আগে শত শত ভক্তদের অংশগ্রহণের মধ্যদিয়ে প্রচলিত নিয়ামুযায়ী কান্তনগর মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয়।
মন্দিরের পুজারী পুলিন সাহা জানান, ভাদ্র মাসের জন্মাষ্টমী তিথির একদিন আগে শ্রী শ্রী কান্তজীউ (রাধা-কৃষ্ণ) দিনাজপুর বাজবাড়ীতে অবস্থান করে। সেখানে তিন মাস পূজা-অর্চনার পর রাস পূর্ণিমার একদিন আগে রাজবাড়ী দেবোত্তর থেকে কান্তজিউ মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয়। এ উপেক্ষ্যে রাজবাড়ী মন্দিরে নারীরা বিভিন্ন পূজা অর্চনা করেন এবং মা (রাধা-কৃষ্ণ বিগ্রহ)-কে বিদায় জানান।
সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টায় যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. বীরেন সিকদার প্রধান অতিথি হিসেবে মাসব্যাপী মেলার উদ্বোধন করবেন। বিশেষ অতিথি থাকবেন জাতীয় সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল, জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম, পুলিশ সুপার মো. হামিদুল আলম ও কাহারোল উপজেলা চেয়ারম্যান মো. হারুন-উর-রশিদ চৌধুরী। সভাপতিত্ব করবেন দিনাজপুর রাজ দেবোত্তর এস্টেট-এর এজেন্ট অমলেন্দু ভৌমিক।
উল্লেখ্য, উপ-মহাদেশের মধ্যে বিরল পোড়া মাটির টেরাকোটা খচিত কারুকার্য সম্বলিত কান্তনগর মন্দির দেশী-বিদেশি পর্যটকদের কাছে যেমন আকর্ষণীয় তেমনি ভাবে ভক্তপ্রাণ হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে তীর্থস্থান হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছে। রাস উৎসবের রাতে মন্দির আঙ্গিনায় রাত্রিযাপন করা মহাপুণ্যের কাজ ভক্তরা বিশ্বাস করেন। মাসব্যাপী মেলা উপলক্ষে মেলায় আগতদের পুণ্য অর্জনের পাশাপাশি নির্মল বিনোদনের জন্য নাম করা সার্কাস ও ধর্মীয় যাত্রাপালার আয়োজন করা হয়েছে।
এছাড়া অসংখ্য খাবারের দোকান, মৃৎ শিল্প, কারু শিল্প, চুড়ি, শাখা, সিঁদুরসহ নানা ধরনের ধর্মীয় পুস্তকের দোকান বসেছে। নওগাঁ, নাটোর, বগুড়া, রাজশাহী, ফরিদপুর, বৃহত্তর দিনাজপুর- রংপুর জেলার হাজার হাজার মানুষ রাস উৎসব দর্শন করতে পার্শ্ববর্তী ভারত ও বিভিন্ন দেশের পর্যটক এবং ভক্তবৃন্দের সমাগম ঘটেছে মেলায়।
বিডি-প্রতিদিন/ ১৩ নভেম্বর, ২০১৬/ আফরোজ