আশুলিয়ায় শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনায় জড়িত থাকা ও উস্কানী দেওয়ার অভিযোগে সাভারের সাবেক এমপি ও ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি ডা. সালাউদ্দিন বাবুকে প্রধান আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলায় সাভার উপজেলার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মিনি আক্তার উর্মি, সাত শ্রমিক নেতাসহ ১৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। শুক্রবার সকালে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহসিনুল কাদির মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এর আগে বৃহস্পতিবার আশুলিয়া থানার উপ পরিদর্শক মহিদুল বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
পুলিশ জানায়, আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চল এলাকায় শ্রমিকদের উস্কানী দিয়ে আন্দোলনে নামিয়ে দিয়েছে শ্রমিক নেতারা। আর সাভারের বিএনপির সাবেক এমপি, উপজেলা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ কিছু নেতাকর্মী তাদেরকে মদদ দিয়েছে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার বিকেলে আশুলিয়ার ইয়ারপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে উপজেলা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মিনি আক্তার উর্মিকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়াও ওই দিন এ ঘটনায় উস্কানী দেওয়ার অভিযোগে সাভার ও আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাত শ্রমিক নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে বৃহস্পতিবার রাতে আশুলিয়া থানার উপ পরিদর্শক মহিদুল বাদী হয়ে ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৭০/৮০ জনকে অজ্ঞাত করে থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহসিনুল কাদির মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চল এলাকা অচল করে দেওয়ার জন্য বেশ কিছু শ্রমিক নেতারা বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকদের উস্কানী দিয়ে আন্দোলনে নামিয়ে দেয়। আর বিএনপির সাবেক এমপি ও চেয়ারম্যান ওইসব শ্রমিক নেতাদের মদদ দিয়ে দেশে অরাজগতা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। এ কারণেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
উল্লেখ, গত ১২ ডিসেম্বর আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চল এলাকার ৪/৫টি পোশাক কারখানায় মজুরী বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন শুরু করে। কয়েকদিনের ব্যবধানে ওই অসন্তোষ শিল্পাঞ্চল এলাকার অর্ধশতাধিক কারখানায় ছড়িয়ে পড়লে কারখানাগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় শ্রমিকদের উস্কানী দেওয়ার অভিযোগে সাভার-আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাত শ্রমিক নেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এছাড়াও ওইসব নেতাদের মদদ দেওয়ার অভিযোগে সাভার উপজেলা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা মিনি আক্তার উর্মিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর আগে সাভার-আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তৃণমূল গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শামীম খান, শ্রমিক ফ্রন্টের সাভার-আশুলিয়া ও ধামরাই কমিটির সভাপতি সৌমিত্র কুমার দাশ এবং স্বাধীন বাংলা গার্মেন্টস কর্মচারী ফেডারেশন আশুলিয়া থানা কমিটির সভাপতি আল-কামরান ও সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহম্মেদ, বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন, শ্রমিক নেতা ইব্রাহিম, মিজানসহ মোট ১৪ শ্রমিক নেতাকে গ্রেফতার করা হয়।
এ ব্যাপারে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, উস্কানী দেওয়ার অভিযোগে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ ১৯ জনকে আটকের পর তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এব্যাপারে আশুলিয়া শিল্প পুলিশের পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন শ্রমিক অসন্তোষে আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চল এলাকার ৮৪টি কারখানা বন্ধ রয়েছে। তবে যেকোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ওইসব কারখানার সামনে অতিরিক্ত বিজিবি ও পুলিশ এবং র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/২৩ ডিসেম্বর ২০১৬/হিমেল