শেরপুর সদর হাসপাতালের রোগী ও ব্যবসায়িরা দাললের অত্যাচারে অতিষ্ঠ। কোন কাজই এখানে দালাল ছাড়া হয় না। সর্বস্তরে দালালের দৌরাত্ব চলছে বেশ কিছু দিন ধরে। এ নিয়ে গণমাধ্যমেও বেশ কয়েকবার খবর হয়েছে কিন্তু দালাল তাড়াতে কর্তৃপক্ষ কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়নি বা নিতে চাইলেও ক্ষমতাধরদের কারণে পিছু হঠতে হয়েছে।
হাসপাতালে রোগী আসার পর থেকে দালাল কর্তৃক সাধারন রোগীদের ভোগান্তি নিত্য দিনের ঘটনা। সংঘবদ্ধ এ দালালদের কাছে হাসপাতালের কর্মকর্তা কর্মচারিদের একটি অংশ জিন্মি। আবার সংশ্লিষ্ঠ অনেকের বিরুদ্ধে দালাল লালন পালন করার অভিযোগ অনেক পুরনো। দালালদের মধ্যে কেউ কেউ রাজনৈতিক দলের পরিচয় বহন করে দাপটের সাথে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। কোন সমস্যা হলে নেতার সুপারিশে পুরাতন ব্যবসায় আবার ফিরে আসে বহাল তবিয়তে। সরকারি কর্মচারিদের মধ্যেও কেউ কেউ এ কাজে জড়িত।
অভিযোগে জানা গেছে সকাল থেকে সারা রাত্রি ধরে শিফটিং করে চলে দালালি পেশা। একদিকে হাসপাতালের ভিতরে সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচির নিয়োগ প্রাপ্ত,সরকারি কর্মচারিদের একাংশ, ২/৩ জন ডাক্তারের এটেন্ট্রটেন্সরা মিলে অপরদিকে হাসপাতালের বাহিরে বিভিন্ন এলাকা থেকে চিহ্নিত কিছু পুরুষ নারী মিলে দালালিপনা করছে। গ্রামের সহজ সরল মানুষরাই প্রতিদিন এ সমস্ত দালালদের খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত হচ্ছে। ডাক্তারের কাছে রোগী পৌছার আগেই দালালদের নির্ধারিত ডায়াগনষ্ট্রিক সেন্টারে পরীক্ষা নীরিক্ষা করে রেডি রিপোর্টসহ দালালরা রোগীদের ডাক্তারের সাথে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে।
হাসপাতালের ভর্তি রোগীও দালালরা ভাগিয়ে নিয়ে কমিশনের চুক্তিতে নির্ধারিত কিছু ডাক্তার, ডায়াগনষ্ট্রিক সেন্টার, ক্লিনিকে নিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছি টাকা। অভিযোগকারিরা বলেছে ৩/৪ টি ডায়াগনষ্ট্রিক সেন্টার, ২/৩জন ডাক্তার ও ৩ টি ক্লিনিক চলে সরাসরি দালালদের মাধ্যমে। দিনের বেলায় যেমত তেমন রাতে দায়িত্বশীল তেমন কেউ না থাকার কারণে রাতে হাসপাতাল চলে যায় ভিতর বাহিরের দালালদের নিয়ন্ত্রণে। ছোট বড় মিলিয়ে হাসপাতালে অন্তত ৯০ জন দালালের নাম পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার হাসপাতালের আশে পাশের ব্যবসায়িরা দুপুরে হাসপাতাল এলাকায় হাসপাতালকে দালাল মুক্ত করতে বিশাল মানব বন্ধন করেছে।
জেলা আঞ্চলিক ডায়গনষ্ট্রিক সমিতির আয়োজনে বিভিন্ন পেশা ও ভোক্তভোগীরা এ মানব বন্ধনে অংশ নেয়। হাসপাতাল এলাকার চিকিৎসা সংশ্লিষ্ঠ দোকানগুলোর সামনে লাগানে হয়েছে “দালাল হঠাও” সংক্রান্ত ব্যানার। জেলা আঞ্চলিক ডায়গনষ্ট্রিক সভাপতি দেলোয়ার হোসেন ক্রিসেন্ট ও সাধারন সম্পাদক মহসিন কবির মুরাদ সেখানে বক্তব্য রাখেন। এলাকার সাবেক পৌর কমিশনার ফারুক আহাম্মেদ জানিয়েছেন, এখন হাসপাতালটিতে মানুষের রোগ না সারিয়ে দালাল সারনো দরকার। দালাল এখন হাসপাতালের ক্যান্সার।
জেলা আঞ্চলিক ডায়গনষ্ট্রিক সমিতি সাধারন সম্পাদক মহসিন কবির মুরাদ বলেছেন, "এখানে সবাই দালালের অত্যাচারে অতিষ্ঠ। চিকিৎসা কেন্দ্রটি এখন দালাললের অভয়ারণ্য। সাধারন মানুষ এখানে খুব অসহায়। সংগঠনের সভাপতি দোলায়ার হোসেন ক্রিসেন্ট বলেছেন সরকারের মহৎ এই প্রতিষ্ঠানে দালালরা সাধারন মানুষের সাথে নিত্য প্রতারণা করে আসছে।"
এখানে দালল একবারে নিমূল হয়নি স্বীকার করে হাসপাতালের তত্বাবধাক ও জেলার সিভিল সার্জন ডাঃ আনোয়ারুল ইসলাম বলেছেন, "আমি ছুটিতে আছি। ইতিপূর্বে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মানব বন্ধনের কথা শুনেছি ছুটি কাটিয়ে এসে বড় সড় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
বিডি-প্রতিদিন/ ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৬/ তাফসীর-৯