পঞ্চগড়ের বিভিন্ন এলাকায় নদীর স্বাভাবিক গতি প্রবাহকে বন্ধ করে চলছে পাথর উত্তোলন। কোথাও কোথাও নদী ভরাট করে পাথর তোলা হচ্ছে। এতে নদী মরে গিয়ে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে চিরকালের জন্য। ভয়াবহ এই ঘটনাটি ঘটছে সদর উপজেলা ও তেঁতুলিয়া উপজেলার কয়েকটি নদীকে ঘিরে।
জেলার চিলকা, ভেরসা, চাওয়াই, করতোয়া এবং ডাহুকসহ বেশ কয়েকটি নদীর গতি প্রবাহকে আটকে দিয়ে এবং নদীর বুকে বালি ফেলে চলছে পাথর উত্তোলনের মহোৎসব। অনেকে নদী দখল করে নদীর বুক থেকেও পাথর উত্তোলন করছেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, সদর উপজেলার চিলকা নদীর গতি প্রবাহকে আটকে দিয়ে মাঝিপাড়া এলাকায় পাথর উত্তোলন করছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। ছোট এই নদীর গতিকে বালির বাঁধ দিয়ে আটকে দিয়ে পাথর তোলা হচ্ছে। বালি ফেলার কারণে নদীটি এখন মরা নদীতে পরিনত হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, মাঝিপাড়া এলাকার পাথর ব্যবসায়ী দুই ভাই আমিনুর রহমান ও আমিনার রহমান মিলে এই নদীর গতি প্রবাহকে আটকে দিয়ে পাথর উত্তোলন করছেন। একই উপজেলার খাসমহল এলাকা থেকে উৎপন্ন হয়ে ২০ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে চিলকা নদী মাঝিপাড়া এলাকায় এসে চাওয়াই নদীর সাথে মিলিত হয়েছে।
এদিকে, চিলকা এবং চাওয়াই নদীর মিলনস্থলে চাওয়াই নদী ভরাট করে পাথর উত্তোলন করছেন রুবেল ইসলাম, ফেরদৌস আলী এবং ফারুক হোসেন। এভাবে বালি ভরাট চলতে থাকলে অল্পদিনেই চাওয়াই নদীটির মৃত্যু হবে। এই দুই নদীকে ঘিরে হাজার হাজার কৃষক ফসল উৎপাদন করছেন। নদী দু'টি মরে গেলে হাজার হাজার হেক্টর জমি মরুভূমিতে পরিণত হওয়ার আশংকা রয়েছে।
এ ব্যাপারে ব্যবসায়ী আমিনুর রহমান জানান, আমার ৫০০ বিঘা জমির উপর দিয়ে চিলকা নদী প্রবাহিত হয়েছে । নদীটি আমার ব্যাক্তিগত সম্পত্তি। আমার সম্পত্তিতে আমি যা ইচ্ছা করতে পারি।
এদিকে, তেঁতুলিয়া উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের কাটাপাড়া এলাকায় ভেরসা নদীর গতিপ্রবাহ বন্ধ করে পাথর উত্তোলন করছেন ওই এলাকার কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। তারা নদী ও নদীর আশে পাশে সরকারি মালিকানার জমিতেও অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করছেন। এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে গণস্বাক্ষর সম্বলিত একটি অভিযোগও দেয়া হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের লোকজন, স্থানীয় তহশিলদার পরিদর্শন করলেও অজ্ঞাত কারনে সবাই চুপচাপ।
কাটাপাড়া গ্রামের আলিম উদ্দিন (৪৫), মোহাম্মদ আলী (৫০),মোস্তফা কামাল, রবিউল ইসলামসহ আরও অনেকে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, পাথর উত্তোলনের বালি দিয়ে মরে যাচ্ছে ভেরসা। বাপদাদার আমল থেকে নদীটা দেখে আসছি। নদী আমাদের অনেক কিছু দিয়েছে। নদী মরে গেলে হাজার হাজার কৃষক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হবে। অসাধু ব্যবসায়ীরা নদী খনন করে পাথর তুলছে। স্থানীয় তহশিলদারসহ প্রশাসনের লোকজনকে জানিয়েছি কিন্তু কাজ হয় না।
জানা গেছে, ভেরসা নদীর গতি প্রবাহকে আটকে দেয়ার কারণে উজানে হাজার হাজার একর জমি খরা মৌসুমে প্লাবিত হয়ে পড়েছে। অপরদিকে পাথরের খাদের মেশিন দিয়ে ভেরসা নদীর গতি প্রবাহকে আটকে দেয়া হয়েছে। ফলে মরে যাচ্ছে ভেরসা নদী।
পঞ্চগড় পরিবেশ পরিষদের সভাপতি তৌহিদুল বারী বলেন, এভাবে নদী ভরাট করে পাথর উত্তোলন করায় কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। নদীর স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় হতে পারে।
জেলা প্রশাসক অমল কৃষ্ণ মণ্ডল জানান, পঞ্চগড়ের মাটিতে প্রচুর নুড়ি পাথর রয়েছে। তাই মাটি খনন করে অনেকেই পাথর উত্তোলন করেন। কিন্তু নদী দখল বা ভরাট করে পাথর উত্তোলন করা বেআইনি। বিষয়টি আমি অবগত নই। যারা বেআইনিভাবে পাথর উত্তোলন করবে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
বিডি প্রতিদিন/৯ জানুয়ারি, ২০১৭/ফারজানা