মেহেরপুর গাংনী উপজেলার নবিনপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মানাধীন ভবনের ২য় তলার সিঁড়ি ধসের ঘটনায় এলজিইডির (স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর) দু’টি উচ্চ সদস্যর প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ ঘটনায় গাংনী থানায় ঠিকাদারের পরিবর্তে প্রধান নির্মান শ্রমিকের নামে একটি সাধারন ডায়েরি করেছে এলজিডি। এদিকে স্থানীয়রা ঠিকাদার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেকের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটির কাছে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে পুরো ভবনটি নতুন করে নির্মানের দাবি জানিয়েছে।
রবিবার মেহেরপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আজিম উদ্দিন সরদার, গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান, গাংনী উপজেলা প্রকৌশলী মাহবুবুল হক নির্মানাধীন অবস্থায় ধসে পড়া ভবন পরিদর্শন করেন।
পরে যশোর এলজিইডির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শফিউল আলমের নেতৃত্বে তিন সদস্যর আরো একটি দল পৃথকভাবে নির্মানাধীন ভবন পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন দলে অন্যদের মধ্যে যশোর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী বিজন কুমার দাস, মেহেরপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আজিম উদ্দিন সরদার ছিলেন।
পরিদর্শন দল দুটি নির্মানাধীন ভবনের ধসে পড়া সিঁড়িসহ ভবনটি ঘুরে ফিরে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে নিম্মমানের সামগ্রী দিয়ে ওই সিঁড়ি নির্মানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ধসে পড়া সিঁড়িটি পুরো ভেঙে ফেলে সিডিউল মোতাবেক সামগ্রী দিয়ে পুনরায় সিঁড়ি নির্মানের নির্দেশ দেন তারা। আরো পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য ধসে পড়া সিঁড়ির কংক্রিটের নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে গেছে পরিদর্শন দল।
বিদ্যালয়ের সভাপতি সুমন আলী বলেন, এলজিইডির উর্ধতন কর্মকর্তারা ধসে পড়া সিঁড়ির কংক্রিটের (মশলা) নমুনা নিয়ে গেছেন। পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তারা জানাবেন বলেছেন। তবে আমাদের দাবি, ভবনটি সিডিউল মোতাবেক নির্মান করা হোক। তা না হলে আমরা ছেলে মেয়েদের স্কুলে পাঠাব না।
এলজিইডির গাংনী উপজেলা প্রকৌশলী মাহবুবুল হক বলেন, ঘটনার দিন রাতেই নির্মানধীন ভবনের প্রধান নির্মান শ্রমিক রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে গাংনী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। ঠিকাদারের নামে না করে শ্রমিকের নামে কেন ? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উর্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে শ্রমিকের নামে জিডি করা হয়েছে।
আইনগতভাবে ঠিকাদারের নামের জিডি বা মামলা না করে শ্রমিকের নামে জিডি করায় শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে প্রধান নির্মান শ্রমিক রফিকুল ইসলাম বলেন, জিডি বা থানায় অভিযোগের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তিনি আরো বলেন, ঠিকাদার যেভাবে কাজ করতে বলেছেন সেভাবেই কাজ করা হয়েছে।
মেহেরপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আজিম উদ্দিন সরদার বলেন, ভবনের ধসে পড়া সিঁড়িটি পুরো ভেঙে নতুন করে নির্মান করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে ভবনের অন্য অংশগুলো মানসম্মত আছে । প্রকৌশলীকে না জানিয়ে ঢালাই করায় ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, পিইডিপি-৩ প্রকল্পের আওতায় ৬৩ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দে গত বছরের মে মাস কাজ শুরু করে তামান্না ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেক পাওয়ার অব এ্যাটর্নি গ্রহণ করেন। গত বছরের মে মাস থেকে কাজ শুরু হলেও ওই কাজটি দেখাশুনা করতেন এম এ খালেকের ব্যবসায়ি পার্টনার মোনায়েম হোসেন মুলাক। গত শনিবার দুপুর ২টার দিকে নির্মানাধীন ২য় তলা ভবনের ছাদ ঢালাইয়ের জন্য সাটারিং- এর কাজ শেষে শ্রমিকরা সিঁড়ি দিয়ে নামতে গেলে দুই সপ্তাহ পূর্বে ঢালাই করা সিড়ি ধসে যায়। এসময় মুক্তার আলী নামের এক শ্রমিক আহত হন। তখন বিদ্যালয়ের পুরাতন টিন শেডে ক্লাস চলছিল। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ধসে পড়ার শব্দে আতঙ্কিত হয়ে এদিক ওদিক পালাতে থাকেন।
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ