বরিশাল বিআইডব্লিউটিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী কার্যালয় ‘হীম নীড়’ চত্ত্বরে থাকা ‘শ্বেতপদ্ম’ পুকুর এখন সারা দেশের ঐতিহ্য। গোলাপী রংয়ের পদ্ম ফুল অহরহ দেখা গেলেও একই জলাশয়ে এত সাদা পদ্ম ফুল পৃথিবীতে বিরল বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান বর্তমানে মরিশাচের রাষ্ট্রদূত মো. আব্দুল মান্নান হাওলাদার।
তিনি বলেন, কাজের প্রয়োজনে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ঘুড়েছেন। কিন্তু দেশ-বিদেশের কোথাও এক জায়গায় এত শ্বেতপদ্ম দেখেননি তিনি। এমনকি সুইজারল্যান্ডেও। বরিশাল তথা সারা দেশের ঐতিহ্য এই ‘পদ্ম পুকুর’ সংরক্ষন করা উচিত বলে মনে করেন সরকারের সাবেক সচিব আব্দুল মান্নান হাওলাদার।
তার মতো সব দর্শনার্থীই মুগ্ধ হন বিরল প্রজাতীর এই শ্বেতপদ্ম দেখে। দর্শনার্থীরা আসেন, পুকুরের চারপাশে ঘুরে দেখেন, সেলফি তোলেন, কেউ কেউ ফুল তুলে নেয়ার চেষ্টা করেন। তারা পদ্মফুল দেখে মুগ্ধ হন, সময় কাটান।
বিএম কলেজের মাস্টার্সের প্রথম বর্ষের ছাত্রী রিংকি হালদার বলেন, এর আগে তিনি গোলাপী পদ্ম দেখেছেন। এই প্রথম তিনি সাদা পদ্ম দেখেছেন, তাও এক জায়গায় সাথে এতগুলো। এগুলো দেখে সত্যিই ভাল লেগেছে তার।
প্রাথমিক শিক্ষিকা জেরিন আক্তার বলেন, পদ্ম ফুলগুলো দেখে মুগ্ধ হওয়ার মতো চমৎকার পরিবেশ। এত গরমেও অসম্ভব সুন্দর একটা পরিবেশে এসে কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যায়।
চাঁদনী নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, এক বড় আপুর কাছে শ্বেতপদ্ম পুকুরের গল্প শুনেছেন। ফুলগুলো দেখে অসাধারণ লেগেছে। মনোরম পরিবেশ। এত ফুল দেখে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই।
সরকারি মহিলা কলেজ ছাত্র নুসরাত কবির বলেন, বরিশাল তথা সারা দেশে এত সুন্দর শ্বেতপদ্ম পুকুর দ্বিতীয়টি নেই। এই শ্বেতপদ্ম সচরাচর দেখা যায়না। সাদা পদ্ম দেখে মনটা ভরে যায়।
বরিশাল বিআইডব্লিউটিএ’র সিনিয়র ড্রাফট্সম্যান একেএম মনিরুজ্জামান জানান, ব্রিটিশ শাসনামলে নগরীর বান্দ রোডের পাশে প্রায় সাড়ে ৫ একর জায়গা জুড়ে স্টিমার কোম্পানীর কার্যালয় প্রতিষ্ঠত হয়। ১৯৬৫ সালে মেরিন ওয়ার্কশপের তৎকালীন ম্যানেজার জার্মান নাগরিক মি. ইলিগনর বিশেষ ব্যবস্থায় মাটির পাত্রে কিছু শ্বেতপদ্ম (সাদা পদ্ম) গাছ সংগহ করে পুকুরের তলদেশে রোপন করেন। এরপর পুরো পুকুর সাদা পদ্মে ছেয়ে যায়। যার পরিচিতি এখন ‘পদ্ম পুকুর’। পদ্ম পুকুরটি বরিশাল বিআইডব্লিউটিএ’র গর্ব বলে তিনি মনে করেন।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সুব্রত কুমার দাস জানিয়েছেন, গ্রীস্মের শুরুতে পদ্মফুল (হবষঁসনড় হঁপরভবৎধ) ফুটতে শুরু করে। এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত শ্বেতপদ্ম পাওয়া যায়। পদ্মফুল মূলত সৌন্দর্য ছড়ায়। এছাড়া এই ফুলের ভেজষ গুণও রয়েছে। সবজি হিসেবেও পদ্মগাছের কান্ড খাওয়া যায়। এটা হার্ভ জাতীয় উদ্ভিদ বা প্লান্ট। এটাকে ভাসমান জলজ উদ্ভিদও বলা হয়।
পুকুরটি বাংলাদেশের ঐতিহ্য স্বীকার করে বরিশাল বিআইডব্লিউটিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী এজেডএম শাহনেওয়াজ কবির বলেন, দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে পুকুরের চারপাশ বাঁধাই করে ওয়াকওয়ে এবং ঘাটলা নির্মাণের পরিকল্পনা তাদের রয়েছে। শিঘ্রই এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে বলে আশা করছেন তিনি।
১৯৪২ সালে জরিপ অধিদপ্তরের এসএ (স্টেট একুইজিশন) নকশায়ও বিআইডব্লিউটিএ’র ৮০ শতাংশ জুড়ে ‘পদ্ম পুকুর’ উল্লেখ রয়েছে।