এক সময় টাঙ্গাইল পুলিশ লাইন এলাকার হাজরা ঘাট এলাকাটি ছিল মাদকের আখড়া ও অপরাধীদের অভয়ারণ্য। অপরাধীদের ভয়ে সন্ধ্যার পর মানুষ ওই এলাকা দিয়ে যেতে সাহস পেতো না। কিন্তু এখন অন্ধকারের সেই মাদকের আখড়া পরিনত হয়েছে আলো ঝলমলে পার্কে। প্রতিদিন বিনোদনের জন্য শত শত মানুষ ছুটে যায় সেখানে। টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ সুপার এই পার্কটি গড়ে তুলেছেন। আর এর নামকরন করা হয়েছে ‘এসপি পার্ক’।
সোমবার বিকেলে পার্কটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে বলে জানিয়েছে জেলা পুলিশ সূত্র। বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক প্রধান অতিথি হিসেবে এর উদ্বোধন করবেন। পরে সন্ধ্যায় পার্কে লেজার শো ও সঙ্গীতানুষ্ঠান পরিবেশিত হবে।
জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, টাঙ্গাইল শহরের পুলিশ লাইনের বিপরীত দিকে লৌহজং নদীর তীরে ছিলো অবৈধ স্থাপনা। সেখানো গড়ে উঠা বস্তিতে বিক্রি হতো মাদক। অপরাধীদের আনাগোনার কারণে সাধারণ মানুষ সন্ধ্যার পর ওই এলাকায় যেতো না। গত বছর টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সেখানে একটি পার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। স্থানীয় লোকজনের সাথে মতবিনিময় করে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেন। নদী খনন করে তীর বাঁধাই করে গড়ে তোলা হয় পার্ক। পুলিশ লাইন মোড় থেকে জেলা কারাগার পর্যন্ত নদীর দু’তীর ঘেসে প্রায় এক কিলোমিটার এই পার্কটি। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন না হলেও প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দর্শনার্থীদের ভীড় লেগে থাকে। কাকডাকা ভোরে শতশত মানুষ আসেন হাঁটতে।
নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি এডভোকেট জাফর আহমেদ পার্কটির নাম এসপি পার্ক করার প্রস্তাব রাখেন। পরে সবাই এই নামের প্রতি সমর্থন দেন।
সরেজমিন পার্কটিতে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘ হাঁটার পথটিতে অসংখ্য মানুষ হাঁটছেন। বসার জায়গাও রয়েছে সেখানে। শিশুদের জন্য দোলনাসহ বেশ কিছু খেলার ব্যবস্থাও রয়েছে। সাজানো গোছানো পার্কটিতে পরিবার পরিজন নিয়েও অনেককে ঘুড়তে দেখা যায়। হাঁটতে আসা জহুরুল হক জানান, আগে এই শহরে হাঁটার জন্য ভালো ব্যবস্থা ছিলো না। এই পার্ক হওয়ার পর তার মত ডাইবেটিক রোগীদের খুব উপকার হয়েছে। গৃহবধূ শামছুন্নাহার জানান, এই পার্কে সব সময় পুলিশ পাহাড়া থাকে তাই নিরাপদে সবাই হাটতে পারে।
পার্ক এলাকার বাসিন্দা মাসুদুর রহমান মিয়া জানান, এ পার্ক হওয়ায় এলাকার চেহারাই পাল্টে গেছে। আগে রুমাল নাকে চেপে ওই রাস্তায় চলতে হতো। এখন পার্কটির সামনে এলে মন জুড়িয়ে যায়।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মাহবুব আলম জানান, আগে এলাকাটি অপরাধ প্রবন ছিল। তাই এলাকার মানুষ দাবি করেন অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের মাধ্যমে মাদক আখড়া নির্মূলে। অবৈধ উচ্ছেদের পর ভবিষতে যাতে এই স্থানে আর অবৈধভাবে দখল করে অপরাধীরা মাদকসহ কোন অপকর্মের আখড়া বানাতে না পারে সেজন্য দৃষ্টিনন্দন এই পার্ক স্থাপন করা হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/৩ ডিসেম্বর ২০১৭/হিমেল