নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ঠাকুরগাওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলায় গড়ে উঠেছে নতুন নতুন ইটভাটা। কয়লার পরিবর্তে বে-পরোয়াভাবে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ খড়ি। ফলে ক্ষতির সম্মুক্ষিণ হচ্ছে পরিবেশ। তবে নতুন নতুন এসব ইটভাটা গড়ে উঠলেও নিরব ভূমিকা পালন করছে জেলা প্রশাসন।
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলা আয়তনে ছোট হলেও প্রয়োজনের তুলনায় দিন দিন দীর্ঘ হচ্ছে ইটভাটার সংখ্যা। ইটভাটার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় পীরগঞ্জ উপজেলার হাজার হাজার গাছ কর্তনের পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে রাস্তাঘাট। এতে পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি সরকারও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। প্রতি বছরেই ইটভাটা এলাকার রাস্তাগুলো মেরামত করা হচ্ছে এলজিইডির পক্ষ থেকে। আর দুর্বৃত্তারা রাতের আধারে গাছ কেটে বিক্রি করছে ভাটা মালিক ও স্থানীয় করাতকল মালিকদের কাছে। অন্যদিকে ইটভাটার মালিকরা আকারে ইট ছোট করে বিক্রি করায় প্রতারণার শিকার হচ্ছে ইট ক্রেতারা।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি ইটের আকার হতে হবে সাড়ে ৯, সাড়ে ৪ এবং পনে ৩ ইঞ্চি বা ১১৭ দশমিক ৫৬ ঘনইঞ্জি। সেই অনুপাতে ইট তৈরি না করে নিজের ইচ্ছেমত ফরমা তৈরি করে বানানো হচ্ছে ইট। এতে পীরগঞ্জ উপজেলার ইটভাটার মালিকরা চড়া দামে ইট বিক্রির পাশাপাশি আকারে ছোট করে মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঠাকুরগাওয়ের পীরগঞ্জে ইট প্রস্তুত ও ইটভাটা আইন লঙ্ঘন করে অনুমোদন ছাড়াই অবৈধভাবে পৌরসভাসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন এবং ফলদ বৃক্ষ বাগানের পাশে ঘনবসতি একলাকায় কৃষি আবাদী ৩ ফসল উৎপাদনশীল জমিতে ১৭টি ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। ইট তৈরির কাঁচামাল হিসেবে কৃষি জমির উপরিভাগে টপসয়েল এর মাটি কেটে তৈরি করা হচ্ছে ইট। এ সব ইটভাটার পাশে কয়লা দেখা গেলেও ইটভাটার জ্বালানী হিসেবে কয়লার বদলে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ।
পীরগঞ্জ পৌর শহর সংলগ্ন গুয়াগাঁও, ভেলাতৈড় এবং উপজেলার চাপোড়, সিন্দুন্না ও লোহালী গ্রাম এলাকায় সবচেয়ে বেশি ইটভাটা স্থাপন করতে দেখা গেছে। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন সংক্রান্ত নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী বসতবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য ও বাগানের নিকটবর্তী এলাকায় এবং কৃষি জমিতে ইটভাটা স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এসব বিধি নিষেধ অমান্য করে ভাটার মালিকরা প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের 'ম্যানেজ' করে নিষিদ্ধ এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করে বীরদর্পে ইটশিল্পের ব্যবসা পরিচলনা করছেন।
পীরগঞ্জ ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজুয়ানুল হক বিপ্লব জানান, জেলা প্রশাসনকে অবগত করেই কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। আর ইটের আকার ছোট করার বিষয়ে তিনি বলেন অন্যান্য ইটভাটা মালিকরা যেভাবে ইট তৈরি করছেন আমরাও সেভাবে তৈরি করছি।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ আবুল কালাম আজাদ জানান, ঘরবাড়ি, কলকারখানা ও ইটভাটা স্থাপনের কারণে প্রতিবছর ব্যাপক হারে ফসলি জমি কমে যাচ্ছে। যেসব কৃষি জমির উপরের টপসয়েল এর মাটি কেটে ইট তৈরির কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ঐ সব কৃষি জমি কমপক্ষে ১৫-২০ বছরের জন্য উৎপাদন ক্ষমতা হারাছে।
এ বিষয়ে পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ ডব্লিউ এম রায়হান শাহ্ এর সাথে কৃষি জমির উপর অনুমোদন ছাড়াই ইটভাটা স্থাপন বিষয়ে কথা বললে তিনি জানান, আমার অফিসে ইটভাটা সংক্রান্ত কোন ফাইল নেই। তবে জেলা প্রশাসক এগুলো দেখেন। ডিসি অফিসের ব্যবসা বাণিজ্য শাখায় খোঁজ করলে এ সব তথ্য পাওয়া যাবে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইটভাটায় কাঠ পোড়ানোর কোন নির্দেশনা নেই। যদি কেউ নির্দেশনা অমান্য করে তবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/২৮ জানুয়ারি ২০১৮/হিমেল