শিক্ষাবিহীন জাতি মূল্যহীন। অথচ অর্থাভাবে নিজের পড়ালেখার চাকা যেমন চিরতরে স্তব্ধ হয়ে গেছে এরকম আর কারো যেন না হয়- এই প্রত্যয় নিয়ে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ় মনোবল নিয়ে নিজের যা সামর্থ তা নিয়ে অন্ধকারের কালিমা দূর করে আলোকিত মানুষ গড়ার লড়াইয়ে নেমেছেন গাড়ীচালক ফারুক। আর তাকে এ কাজে সহযোগিতা করছেন তারই সহধর্মিনী ছাবেরা আক্তার।
নিজে অর্থশালী নন, তবুও যা আছে তাই নিয়ে নিরক্ষর মানুষের মাঝে আলো ছড়াতে দরিদ্রদের নিয়ে কাজ করছেন ফারুক দম্পত্তি। এটাই তাদের আত্মতৃপ্তি।
দিনাজপুর সদর উপজেলার কাশিমপুর গ্রামের মালিপুকুর এলাকার মৃত মাহবুব হোসেনের পুত্র বিএডিসি’র ড্রাইভার মো. ফারুক হোসেন। বর্তমানে তিনি বিএডিসি রংপুর দপ্তরের ট্রাক সহকারির বিপরীতে গাড়ী চালক হিসেবে কাজ করছেন।
এলাকার শিক্ষাবঞ্চিত দরিদ্র মানুষের মাঝে বই-খাতা, কলম, পেন্সিল, চকসহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ বিলিয়ে দিয়ে নিজের অপূর্ণতাকে লাঘব করতে চান তিনি। আর সেজন্য ছুটে চলেন তার এলাকার গ্রামের মেঠো পথ ধরে বিভিন্ন বাড়ী বাড়ী। শুধু শিশু নয় এলাকার শিক্ষাবঞ্চিত বয়স্কদের হাতেও বিনামূল্যে তুলে দেন শিক্ষা উপকরণ।
সোমবার শিক্ষা প্রেমিক ফারুক হোসেন অসহায়-দরিদ্র, মেধাবী প্রায় সাড়ে ৩শ শিক্ষার্থীর মাঝে বরাবরের মতো বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করলেন।
বিনামূল্যে বোর্ড বই পাওয়ার পর অন্যান্য শিক্ষা উপকরণও বিনামূল্যে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠে শিশু শিক্ষার্থীরা। আগামী দিনে ভালোভাবে পড়াশোনা করার প্রত্যয়ে উজ্জীবিত শিক্ষার্থীরা হৈ-হুল্লোড়ে ফিরে যায় বাড়ীতে।
এছাড়াও শিক্ষা উপকরণ বিতরণকালে অতিথি ছিলেন সদর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যবসায়ী নুরে আলম, ব্র্যাক স্কুলের প্রধান শিক্ষক রুকসানা বেগম, সহকারি শিক্ষক রুমা পারভীন, মুক্তা বানু, রুমা আক্তার, ফারুক হোসেনের গর্বিত সহধর্মীনি সাবেরা আক্তারসহ অন্যান্য গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
উল্লেখ্য, নিজ পরিবারের অভাবের তাড়নায় শিক্ষা বঞ্চিত এই যুবক অষ্টম শ্রেণী পাশের পর আর পড়ালেখা করার সুযোগ পাননি। সংসারে সহায়তার জন্য তাই গাড়ী ড্রাইভার বাবা মাহবুব হোসেন এর কর্মস্থল বিএডিসি বীজ প্রক্রিয়াজাতকরনে ফারুক বস্তা টানার কাজ নেয়। পরে সবার আন্তরিকতা ও গাড়ী চালানায় প্রশিক্ষন ও দক্ষ হলে সে ড্রাইভারের কাজ নেয়। অভাবের যাতাকলে পিষ্ট সেই যুবক ফারুক নিজে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়ার জ্বালা নিভানোর জন্য সিদ্ধান্ত নেন, জীবনে এক টাকা আয় করলে অন্ততঃ পচিশ পয়সা এলাকার বঞ্চিত, অভাবী, দুঃস্থ, দরিদ্রদের লেখাপড়ায় সহায়তা করে যাবো। অর্থ উপার্জন করলেও ফারুকের মনে প্রশান্তি আসে নাই। নিজের অশান্ত মনকে শান্তনা দিতে গরীব-দুঃস্থদের মাঝে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ফারুক।
১৯৯৭ সালে শিক্ষা উপকরন দিয়ে অভাবী ছাত্র-ছাত্রীদের সহায়তা করা শুরু করলেও ২০০৫ সাল থেকে নিজ গ্রামের সর্বত্র এটা ছড়িয়ে দেয় এবং এখনও অব্যাহত রয়েছে।
বিডিপ্রতিদিন/ ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮/ ই জাহান