সারাদেশে সরকারের পক্ষ থেকে সুলভ মূল্যে চাল বিতরণে সুনাম অর্জন করলেও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে চাল বিতরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে ঠাকুরগাঁওয়ের বেশ কয়েকজন ডিলারের বিরুদ্ধে। ফলে হতদরিদ্র সুবিধাভোগীরা সরকারের দেয়া কম দামে চাল কেনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অন্যদিকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়ার পরও ব্যবস্থা না নিয়ে ডিলারদের পক্ষে সাফাই গেয়ে জনবল সংকটের দোহাই দিলেন জেলা সদরের খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের তথ্য মতে, প্রথম ধাপে মার্চ ও এপ্রিল দুই মাস ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা, সালন্দর, রহিমানপুর, জগন্নাথপুরসহ ২১টি ইউনিয়নে ৪৪ জন ডিলার নিয়োগের মাধ্যমে প্রত্যেক ইউনিয়নের কমপক্ষে ১ হাজার জন সুবিধাভোগী কার্ডধারীদের সোম, মঙ্গল ও বুধ সপ্তাহে ৩ দিন ১০ টাকা কেজি দরে জন প্রতি ৩০ কেজি করে চাল বিতরণ শুরু করা হয়। তবে ইতোমধ্যে ঢোলারহাট, রুহিয়া, রহিমানপুরসহ ১১টি ইউনিয়নে চাল বিতরণ শেষ হয়েছে। বাকি ইউনিয়নগুলোতে তা চলমান রয়েছে।
খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের সদর কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার সিংহের দেয়া তথ্য অনুযায়ী মঙ্গলবার খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, উল্লেখিত যেসব ইউনিয়নে চাল বিতরণ করা শেষ হয়েছে তার মধ্যে সদর উপজেলার রহিমানপুর, ঢোলারহাট ও রুহিয়া ইউনিয়নে চাল বিতরণ এখনো অব্যাহত রয়েছে।
ঢোলারহাট ও রহিমানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সীমান্ত কুমার বর্মন ও আব্দুল হান্নান হান্নু জানান, আমাদের ইউনিয়নে এখনো চাল বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। প্রত্যেক কার্ডধারীকে ১০ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি করে সুষ্ঠুভাবে চাল বিতরণ করা হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেন। যা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তার দেয়া তথ্য ভুল। তা কাম্য নয়।
এর আগে সোমবার সদরের সুখানপুখুরি, গড়েয়া, জামালপুর ইউনিয়িন ঘুরে দেখা গেছে এসব ইউনিয়নে সুষ্ঠুভাবে চাল বিতরণ হলেও সদরের আকচা ইউনিয়নের নিয়োগপ্রাপ্ত ডিলার শহিদুল ইসলামের নিকট চাল ক্রয় করে ওই ইউনিয়নের চন্ডিপাড়া গ্রামের বাদল বর্মন, দূর্জয় ও কর্নবালা। প্রত্যেকে ১০ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি করে চাল ক্রয় করে ডিলারের কাছে। ওই চাল অন্য জায়গায় ওজন দিলে বাদল বর্মনের পৌনে এক কেজি ও বাকি দুজনের আধা কেজি করে চাল ওজনে কম পায়। এ নিয়ে প্রতিবাদ করলেও সুফল পাননি কার্ডধারীরা।
অন্যদিকে একই ইউনিয়নের ফারাবাড়ি এলাকার আরেক ডিলার জয় নারায়ন চোখ ফাঁকি দিয়ে ৫০ কেজির দুই বস্তা চাল বিক্রির উদ্যেশ্যে ব্যবসায়ীর কাছে পাচার করে। এসময় স্থানীয়রা তা দেখে সাংবাদিকদের খবর দেয়। সাংবাদিকরা ঘটসাস্থলে গিয়ে ওই ব্যবসায়ীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাকে দুই বস্তা চাল ডিলার জয় নারায়ন রাখতে বলেছেন বলে আমি রেখেছি।
এ বিষয়ে ডিলার শহিদুল ইসলাম ওজনে কম দেয়া হয়নি বলে দাবি করেন। আরেক ডিলার জয় নারায়ন বলেন, ৩ জন কার্ডধারী কার্ড বিক্রি করে দেয়ায় চালের বস্তা মুদি দোকানে রাখা হয়েছিল।
আকচা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুব্রত কুমার বর্মন জানান, ওজনে কম ও চাল পাচার করে বিক্রির অভিযোগটি সদরের খাদ্য কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। খাদ্য বিভাগ ডিলারের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নিবেন উনারা ভাল জানেন। তবে খাদ্য কর্মকর্তার গাফিলতির কারণেই অনিয়মগুলি হচ্ছে। চাল বিতরণের সময় খাদ্য নিয়ন্ত্রকের নজরদারি নেই বলেই অনিয়মের সুযোগ পাচ্ছে ডিলাররা। আমরা আশা করবো পরিচ্ছন্ন ডিলারের মাধ্যমে চাল বিতরণ কর্মসূচির ব্যবস্থা নিবেন।
এ বিষয়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সদর কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার সিংহ জানান, জনবল সংকটের কারণে চাল বিতরণের সময় আমাদের লোকজন সব সময় থাকতে পারে না। তবে ওজনে কম ও কোন ডিলার যদি কার্ডধারীদের চাল বিক্রি করে থাকেন তাহলে তাদের ডিলারসিপ বাতিল করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/১৮ এপ্রিল ২০৮/হিমেল