ঠাকুরগাঁওয়ে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় পারুল আক্তার নামে এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এই মৃত্যুর ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা মীমাংসা করেছে প্রভাবশালী একটি মহল। গত সোমবার রাত ১০টার দিকে শহরের ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। নিহত পারুল আক্তার (২৩) সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের বাশুদেবপুর গ্রামে রাজীব হোসেনের স্ত্রী।
নিহতের স্বামী রাজীব হোসেন জানান, তার স্ত্রী পারুল আক্তার গর্ভবতী ছিলেন। সোমবার সন্ধ্যায় স্ত্রীর প্রসবের যন্ত্রণা বেড়ে যাওয়ায় তাকে ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর সকাল ৮টার দিকে ডাক্তার জাহাঙ্গীর আলম আমার স্ত্রীর অপারেশন করেন এবং একটি ছেলে সন্তান জন্ম হয়। অপারেশন শেষ হওয়ার কয়েক ঘন্টা পর থেকে আমার স্ত্রীর পেটের ব্যাথা প্রচন্ড আকার ধারণ করে এবং যন্ত্রণায় ছটফট করতে শুরু করে।
তাৎক্ষণিকভাবে ক্লিনিকের দায়িত্বে থাকা স্টাফদের জানানো হলে তারা কোন সেবা প্রদান করেননি। এমনকি ডাক্তার জাহাঙ্গীর আলমও কোন খোঁজখবর নেয়নি। রাত ১০ টার দিকে ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে আমার স্ত্রীর মৃত্যু হয়।
এদিকে রোগীর আত্মীয়-স্বজনরা ক্ষিপ্ত হয়ে ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতাল ভাঙচুর করে। ডাক্তার জাহাঙ্গীর আলম আমার স্ত্রীর ঠিকমত অপারেশন করেনি। স্ত্রীর পেটে প্রচুর পরিমাণে রক্তক্ষরণ হওয়ায় সে মারা যায়। এটি পুরোপুরিভাবে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসা। ডাক্তারের ভুলের কারণে আজ আমার স্ত্রী এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। আমি ডাক্তার ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। আমি থানায় অভিযোগ করতে চাইলেও ডাক্তার জাহাঙ্গীর ও তার লোকজন আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে বলে জানান নিহতের স্বামী রাজীব হোসেন।
ঘটনার পর ঠাকরগাঁও ক্লিনিক মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ নিহতের পরিবারকে নিয়ে মীমাংসায় বসেন। সেখানে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা দিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়া হয়। তবে নিহতের পরিবারের হাতে সামান্য টাকা ধরিয়ে বাকি টাকা লুটপাট হয় বলে অভিযোগ নিহতের স্বামীর।
ডাক্তার জাহাঙ্গীর আলমের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মেয়েটির অপারেশন করে সুস্থ হয়েছে। কোন ভুল হয়নি বলে ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন ডা. আবু মো. খয়রুল কবির জানান, অপারেশন করার কয়েক ঘন্টা পর ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে একটি মেয়ের মৃত্যু হয়। ডাক্তার নাদিরুলল আজিজকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গেল ২ বছরে ডা. জাহাঙ্গীর আলমের হাতে ৪ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এবার তার বিরুদ্ধে মামলা দাখিল করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
সদর থানার ওসি আশিকুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার