নদীর উজান মুখে বাঁধ নির্মাণ আর দীর্ঘদিন খনন না করায় অবৈধ দখলে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে এক সময়ের খরস্রোতা নদী ঝিনাই। যে নদীর বুক চিরে আসা-যাওয়া করতো বড় বড় নৌকা, আর মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো স্থানীয় জেলেরা। আজ সেই ঝিনাই নদীর বুকে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ, শীর্ণ খালের মতো নদীর যেটুকো টিকে আছে, তাও যেন অস্তিত্ব হারানোর অপেক্ষায়।
প্রচুর ঝিনুক পাওয়া যেতো বলে স্থানীয়রা নদীর নাম দিয়েছিলো ঝিনাই নদী। খরস্রোতা ঝিনাই নদীর বুকে বড় বড় বজড়া আর পাল তোলা নৌকার আসা-যাওয়া ছিলো নিত্য-নৈমিত্তিক দৃশ্য। একটা সময় জামালপুর থেকে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় যাতায়াতের পথও ছিল এই নদীই। মাছের ভাণ্ডার খ্যাত ঝিনাই নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা চলতো স্থানীয় জেলেদের, আর নদীর পানি ব্যবহার হতো সেচ কাজে। ঝিনাই নদীর বৈচিত্র্যময় এসব দৃশ্য এখন শুধুই স্মৃতি। প্রায় দুই যুগ আগে বাঘলদি এলাকায় ঝিনাই নদীর উজানে বাঁধ দেয় স্থানীয়রা। এরপর থেকেই খরস্রোতা ঝিনাই নদী তার যৌবন হারাতে শুরু করে। নদী খননের উদ্যোগ না নেয়ায় দিনের পর দিন নব্যতা হারিয়ে ঝিনাই নদী এখন পরিণত হয়েছে শীর্ণ খালে। স্থানীয় জেলেরা নদীতে জাল ফেললেও দেখা মিলে না মাছের। এখন নদীর বুক জুড়ে শোভা পাচ্ছে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। নদী দখল করে তৈরি করা হয়েছে বসতবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। নদীর যেটুকো খালের মতো টিকে আছে বর্ষাকালে কিছুটা পানি থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে তা পরিনত হয় বালুচরে।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) জামালপুরের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলী বলেন, জামালপুরের ছোট-বড় সবকটি নদীই আজ অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে নদীগুলোর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। আর ঝিনাই নদীর যৌবন ফিরিয়ে আনতে নদী খনন অত্যন্ত জরুরি।
জামালপুরের জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর জানিয়েছেন, ঝিনাইসহ জামালপুরের সব নদ-নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে ঝিনাই নদীর পুনঃজগরণ ঘটবে। অস্তিত্ব সংকটে থাকা ঝিনাই নদী পুনঃউদ্ধারে দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়া গেলে, হারিয়ে যাওয়া নদীগুলোর তালিকায় দ্রুতই উঠে আসবে ঝিনাইয়ের নাম।
বিডি-প্রতিদিন/১৪ মে, ২০১৯/মাহবুব