হাত-পা ছাড়াই জন্ম নেওয়া যশোরের মণিরামপুর উপজেলার খানপুর গ্রামের সেই লিতুন জিরা এবারের এসএসসি পরীক্ষায় যশোর বোর্ড থেকে জিপিএ-৫ অর্জন করেছে।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ফলাফল জানার পর লিতুন জিরার পরিবারের সদস্যরা ও স্কুলের শিক্ষকরা আনন্দে ভাসছেন।
লিতুন জিরা স্থানীয় গোপালপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। সে মণিরামপুর উপজেলার শেখপাড়া খানপুর গ্রামের কলেজ শিক্ষক হাবিবুর রহমান ও গৃহিণী জাহানারা বেগমের মেয়ে।
২০০৮ সালের ২৫ জুন হাত-পা বিহীন জন্ম হয় লিতুন জিরার। শুরুতে মেয়ের শারীরিক অবস্থা দেখে পিতা-মাতা ও পরিবারের সদস্যরা হতাশ হলেও অধম্য মেধার কারণে সেই মেয়েটি এখন পরিবারের আশার আলোতে পরিণত হয়েছে।
লিতুন জিরা বলেন, আমি আশানুরূপ ফল পেয়েছি। আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। মা-বাবা ও শিক্ষকদের কাছে কৃতজ্ঞ, যারা আমার জন্য অক্লান্ত শ্রম দিয়েছেন। আমি পরিবারের বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। লেখাপড়া শিখে ডাক্তার হয়ে দেশ সেবায় অংশ নিতে চাই।
লিতুন জিরার বাবা কলেজ শিক্ষক হাবিবুর রহমান বলেন, মেয়ের সাফল্যে আমরা খুব খুশি। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। তিনি মেয়ের ও আমাদের কষ্ট সার্থক করেছেন। আমার মেয়ের শিক্ষকদের প্রতিও আমি কৃতজ্ঞ।
তিনি আরও বলেন, শুরু থেকে প্রতি ক্লাসে মেয়ে প্রথম হয়েছে। লেখাপড়ার পাশাপাশি রচনা প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সে স্বর্ণপদকসহ জাতীয় ও জেলা পর্যায়ে ছয়টি পুরস্কার জিতেছে। মেয়ে আমার বড় হয়ে ডাক্তার হতে চায়। আমার কাছে সে বোঝা নয়, বরং তাকে নিয়ে আমি অহংকার করি। কারণ মেয়ের কৃতিত্বের জন্য দেশের মানুষ আমাকে চিনেছে।
লিতুনের প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম বলেন, লিতুন জিরা অসম্ভব মেধাবী। লেখাপড়ার পাশাপাশি কো-কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিজে সে খুবই দক্ষ। হাত-পা না থাকায় চোয়াল ও বাহুতে কলম চেপে লিখে যে মেধার কৃতিত্ব দেখানো যায়, তার দৃষ্টান্ত লিতুন জিরা। এবার এসএসসিতে সে জিপিএ-৫ পেয়েছে। আশা করি সামনের ধাপগুলোতেও সে মেধার একইরকম স্বাক্ষর রাখবে। আমরা তার সাফল্যে খুব খুশি।
স্থানীয় খানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির মাধ্যমে লিতুন জিরার স্কুল জীবন শুরু হয় ২০১৪ সালে। প্রথম দিকে বাবা-মায়ের কোলে চড়ে স্কুলে যেত সে। পরে হুইলচেয়ারে চড়ে পরিবারের সাহায্যে স্কুলে যাওয়া শুরু করে। পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি লাভের পর গোপালপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। সেখান থেকে অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি লাভের পর সে একই প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞান বিভাগে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। সেখান থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধার সাফল্য দেখিয়েছে লিতুন।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল