পার্বত্যাঞ্চলে এবারও জুমের বাম্পার ফলন হয়েছে। এখন পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে ঝুলছে সোনালী রঙের ধান। এ যেন সবুজের বুক জুড়ে সোনালী ধানের হাসি। সে হাসিতে হাসছে জুমিয়ারা অর্থাৎ কৃষাণ কৃষাণীরা। তাদের চোখে মুখে এখন আনন্দের উচ্ছাস। এরই মধ্যে পাহাড়ের চলছে জুম কাটার উৎসব। তাই ব্যস্ত সময় পার করছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা। সবাই উৎফুল্ল মনে জুমের পাকা ধান সংগ্রহ করছে। একই সাথে ধুম পড়েছে মারফা, বেগুন, ধানি মরিচ, ঢেঁড়শ, কাকরোল, কুমড়াসহ বিভিন্ন ফসল তোলার কাজেও।
স্থানীয় কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসরত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের জীবিকার প্রধান উৎস জুম চাষ। বাংলাদেশের মধ্যে শুধু তিন পার্বত্য জেলা- রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা এ চাষাবাদ করে থাকে। পাহাড়ে ঢালে বিশেষ পদ্ধতি চাষ করা হয় বলে এর নাম ‘জুমচাষ’ হিসেবে পরিচিত।
স্থানীয় জুমচাষী রেনুবালা চাকমা ও জোনানি চাকমা জানান, জুমে বীজ বপনের ৫ মাস পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের পর ফসল পাওয়া যায়। জুমে শুধু ধান নয়, চাষ হয় মিশ্র ফসলও। যেমন- ধান, মারফা, মিষ্টি কুমড়া, ভুট্টা, তুলা, তিল, আদা, হলুদ, মরিচ,বেগুন, জুরো আলু, সাবারাং,মারেশ দাদি (ডাটা), পোজি, আমিলে, ওলকচু, সাম্মো কচু, ঢেড়শ, কলা, পেঁপে ও যবসহ প্রায় ৩৩টি জাতের ফসল উৎপাদন করা হয়। বছর শেষে অর্থাৎ পৌষ-মাঘ মাসে পাহাড়ের ঢালে গাছ-পালা- বন-জঙ্গল কেটে আগুনে পুড়িয়ে ফেলে। গাছ-গাছালি পরিষ্কার করার পর জুম চাষে উপযোগী করে তোলা হয় স্থানটি। এপর বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে পোড়া জুমের মাটিতে গর্ত খুঁড়ে এক সঙ্গে বিভিন্ন রকম বীজ বপন করে থাকে। ধান পাকে ভাদ্র-আশ্বিন মাসে। সব শেষে কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে তোলা হবে তুলা, তিল ও যব। তবে একটি স্থানে একবারই জুম চাষ করা হয়। পরে বছর জুমচাষ করার জন্য নতুন পাহাড় খুঁজে নেন জুম চাষীরা।
অন্যদিকে, পার্বত্যাঞ্চলে প্রতি বছর কত একর জায়গায় জুম চাষ হয়- তাঁর সঠিক পরিসংখ্যানের তথ্য আজও জানতে পারেনি কৃষি বিভাগ।
তবে রাঙামাটি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী পবন কুমার চাকমা বলছেন, ৎ চলতি বছর শুধু রাঙামাটি জেলায় জুম চাষ হয়েছে ৫হাজান ৯৬০ হেক্টর জমিতে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্র ধারা হয়েছে ৫হাজার ৯৬০ মেট্টিক টন। গত বছরের তুলনায় এবার জুমের ব্যাপক ফলন হয়েছে। শবেমাত্র শুরু হয়েছে রাঙামাটি জুমা তোলার কাজও।
তিনি আরও বলেন, রাঙামাটি প্রায় ১৮টা জাতের জুমে ধান চাষ হয়ে থাকে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- হরিন বিনি, পাধাতটারা, আমেই, কালা কবরক, লঙ লঙ, মেলে (কুকী), কামারাঙ, তোর্গী, বাধেইয়া, কবরক, লেঙদাচিকন, গেলঙ, পাত্তেগী, গুরি, বিনি, কবাবিনি ও লোবাবিনি। পাহাড়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা মধ্যে যারা জুম চাষ করে থাকে, তারা যাতে উচ্চ ফলনশীল ধান ও সবজির আবাদ করতে পারে, সে বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা। এ মৌসুমে উপযুক্ত জলবায়ু ও বৃষ্টিপাতের কারণে আশানুরূপ ফলন হয়েছে। আশা করি এবছর খাদ্য সংকট হবে না জুম চাষীদের।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার