ফসল রক্ষায় মাঠে মাঠে ইঁদুর নিধনে ঘুরে বেড়ান নাটোরের বাগাতিপাড়ার মুক্তার মোল্লা (৪৬)। কষ্টে উৎপাদিত ফসলের ক্ষতির হাত থেকে কৃষকদের বাঁচাতে স্বেচ্ছাশ্রমে এ ইঁদুর মারার কাজটি করেন তিনি।
দিনমজুর মুক্তার মোল্লার এ ব্যতিক্রমী উদ্যোগ রীতিমতো এলাকায় সাড়া ফেলেছে। তিনি উপজেলার সদর ইউনিয়নের চকহরিরামপুর গ্রামের আব্দুস সামাদ মোল্লার ছেলে।
রবিবার ফাঁদে আটকা পড়া বেশ কিছু ইঁদুরসহ উপজেলা কৃষি অফিসে হাজির হয়েছিলেন তিনি। সে সময় কথা হয় তার সাথে।
তিনি জানালেন, দশ বছর ধরে উপজেলার ভেতরের চকহরিরামপুর, হরিরামপুর, তমালতলা, যোগীপাড়া, কোয়ালীপাড়াসহ আশপাশের মাঠে মাঠে ইঁদুর নিধনের খোঁজে ঘুরে বেড়ান। এক সময় তিনি শ্যালোমেশিনে পানি সেচের ব্যবসা করতেন। ফসলের ক্ষেতে পানি দেওয়ার সময় গর্ত থেকে বেরিয়ে আসা ইঁদুর তিনি মারতেন। এরপর বিষটোপ দিয়ে ক্ষেতের এবং বাড়ির ইঁদুর নিধন করতেন। এভাবে ইঁদুর মারার নেশা তাকে পেয়ে বসে। এখন তিনি অর্ধশত সিটকা ফাঁদ কিনেছেন। প্রায় দু’বছর ধরে এই ফাঁদেই তিনি ইঁদুর নিধন করে থাকেন। প্রতিদিন বিকাল হলেই ময়দার টোপ ফাঁদে লাগিয়ে ক্ষেতের আইলে রেখে দেন। একবার রাত নয়টার দিকে এবং আরেকবার পরদিন সকালে মাঠে নেমে ফাঁদে ইঁদুর পড়েছে কিনা যাচাই করেন।
পরিবেশের কথা মাথায় রেখে ফাঁদে আটকা পড়া ইঁদুরগুলো তিনি মাটিতে পুঁতে দেন। প্রতিদিন প্রায় ৩০ থেকে ৪০টি ইঁদুর মারেন। একদিনে তিনি সর্বোচ্চ ৩৪৪ টি ইঁদুর মারেন। নিজের জমি নাই তবুও এভাবে দশ বছর ধরে চলছে তার ইঁদুর নিধনের ব্যতিক্রমী নেশা। এ দশ বছরে অন্তত ৫০ হাজার ইঁদুর মারার দাবি করেছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘এক সময় কামলা দিয়ে জমির মালিকের কাছ থেকে ধান নিতাম। একদিন মাটির ঘরের মেঝেতে রাখা সব ধান গর্ত করে ইঁদুর নামিয়ে নেয়। সেসময় ইঁদুর মারতে সিটকা ফাঁদ পেতেছিলাম। ওই ফাঁদে আটকা পড়ে হাতের একটি আঙ্গুলের মাথা কাটা পড়ে। তখন থেকে ইঁদুর নিধনের জিদটা আরও বেড়ে যায়। এখন কৃষকদের কষ্টে উৎপাদিত ফসল রক্ষায় ইঁদুর মারতে মাঠে মাঠে ঘুরি।’
এ ব্যাপারে চকহরিরামপুর গ্রামের জাফর প্রামানিক জানান, দীর্ঘদিন থেকে তাদের মাঠে মুক্তার মোল্লাকে ইঁদুর নিধন করতে তিনি দেখছেন। এলাকায় তিনি ইঁদুর মারার মুক্তার মোল্লা নামে পরিচিতি পেয়েছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার মোমরেজ আলী বলেন, ধান, গম, মসুর, কলাইসহ বিভিন্ন ফসলের জন্য ক্ষতিকর ইঁদুর নিধনে প্রতি বছর বিশেষ সপ্তাহ পালন করে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়। কিন্তু স্বেচ্ছায় মুক্তার মোল্লার এই উদ্যোগে ফসলের ক্ষতির হাত থেকে কৃষকরা রক্ষা পাবেন।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন