সব অপশক্তি বিনাস করে কল্যাণ প্রতিষ্ঠায় দেবী দুর্গা মর্তোলোক ছেড়ে চলে যাওয়ার মধ্য দিয়ে শেষ হল হিন্দু ধর্মালম্বীদের শারদীয় দুর্গোৎসব। প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে বগুড়ার ধুনট পৌর এলাকার সরকারপাড়া ইছামতি নদীর তীরে মঙ্গলবার গড়ে উঠেছিল ঐতিহ্যবাহী বউ মেলা।
প্রায় শতাব্দী প্রাচীন এই বউমেলায় প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ছিল ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভীড়। ব্যাপক উৎসাহ উদ্দিপনা আর নানা আনন্দ আয়োজনে দেবী দুর্গা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এক দিনের বউ মেলার অনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়।
সরেজমিনে জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল থেকে দোকানীরা পসরা সাজিয়ে রাখে। কেউ কেউ আগের দিনে পসরা সাজিয়ে নিজের দোকান দিয়েছেন। ধুনট পৌরসভার ছোট একটি গ্রাম সরকারপাড়া। ওই গ্রামে শতভাগ হিন্দু সম্প্রদায়ের বসবাস। গ্রামের পূর্বপাশ দিয়ে বহমান ইছামতি নদী। নদীতে ধুনট সদর, চরধুনট, দাসপাড়া ও মালোপাড়া সহ আশপাশের প্রতিমা এক সাথে বিসর্জন দেওয়া হয়। প্রতিমা বির্সজন উপলক্ষে লোকজনের সমাগম হওয়ায় ওই গ্রামে প্রতিবছর মেলা বসে। শতাব্দী প্রাচীন এ মেলায় বেলা গড়ার সাথে সাথে দর্শনার্থীদের সমাগম ঘটে। সব বয়সের উৎসুক মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়।
ধুনট সদর থেকে পূর্ব দিকে মেলার দূরত্ব মাত্র এক কিলোমিটার। গ্রামীণ সড়ক জুড়ে মানুষের কোলাহল। শিশুর হাতে মেলার বাঁশি। হাওয়ায় ভাসা রঙ্গিন বেলুন। নব সাঁজে বধূর ঘোমটার ফাঁক দিয়ে উকি মারছে সিথির সিঁদুর। গ্রামটি যেন হঠাৎ করে জেগে ওঠে কোন এক অজানা পরশে। বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজাকে ঘিরে সরকারপাড়া হয়ে ওঠে এক উৎসবমুখর গ্রাম। মেলায় হিন্দু ধর্মালম্বী লোকজন আসে ভক্তি আর মানত নিয়ে। কিন্তু অন্য ধর্মের লোকজন আসে আনন্দ উৎসব করতে। মূহুর্মূহু উলুধ্বনি, সাঁকের আওয়াজ, ঢাক কাঁসরের তালে তালে চলে আরতির নাঁচ। ধূপের সরভিত ধোঁয়া, বাতাসে নাড়ু-সন্দেস-মিষ্টির গন্ধ আর সাউন্ড বক্সে হাই ভলিয়মের শব্দ মেলার উৎসবের আমেজ।
সকল অপশক্তি বিনাস করে কল্যাণ প্রতিষ্ঠায় দেবী দুর্গা মর্তোলোক ছেড়ে এক বছরের জন্য চলে যাওয়ার দৃশ্য দেখাই এই মেলার প্রধান আকর্ষণ। বিজয় দশমীতে সূর্যাস্তের সাথে সাথে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে মেলার সমাপ্তি হয়।
যুগযুগ ধরে এই মেলা হয়ে আসছে। দিন বদলের সাথে সাথে মেলার রুপ, মাধুর্যের পরিবর্তন ও প্রসার ঘটছে।
বগুড়ার ধুনট পৌর এলাকার সরকারপাড়ায় গত প্রায় ৬৭ বছরের ধারাবাহিকতায় এবারের মেলা যেন বিজয়ার রঙে রাঙানো ছিল। প্রতিবছরের ন্যায় এবারো হাজার হাজার নারীর সমাগমে মুখরিত হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গন। এ মেলায় শুধু শিশু ও নারীরা প্রবেশ করতে পারে। পুরুষরা মেলা প্রাঙ্গনের বাহিরে অপেক্ষা করে থাকে। বিজয়া উপলক্ষে মেলার আয়োজন হলেও সকল ধর্মের মানুষ এই মেলায় নিজেদের পছন্দমত কেনাকাটা করে থাকেন।
মেলায় আগত ক্রেতা সুরভী রানী, অনিতা রানী, আরতী রানী ও জান্নাতুল ফেরদৌস জানায়, মেলার ভেতরে কোন পুরুষ লোক না থাকায় অনেক স্বাচ্ছন্দে কেনাকাটা করেছি এবং দামও কিছুটা কম ছিল।
ধুনট উপজেলা পূজা উদয্পান কমিটির সভাপতি শ্রী বিকাস চন্দ্র সাহা জানান, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও শতাব্দী প্রাচীন বউ মেলায় ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় ছিল।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন