বঙ্গোপসাগরের বুকে জেঁগে ওঠা নতুন ভূখণ্ড ‘চরবিজয়’ আবিষ্কারের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উৎসব পালিত হয়েছে।
বুধবার দিনভর নানা আনুষ্ঠানিকতায় চরবিজয় আবিষ্কারের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উদযাপন করেন চরবিজয় সোসাইটি নামে একটি সংগঠন।
কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আব্দুল বারেক ফরাজীর নেতৃত্বে স্থানীয় রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মী ও উৎসুক ৭০ জন মানুষ নিয়ে বুধবার সকাল ৮টার দিকে দুটি ট্রলার চরবিজয়ের উদ্দেশে রওয়ানা হয়।
কুয়াকাটা থেকে গঙ্গামতি লেক হয়ে পূর্ব-দক্ষিণ দিকে ২ ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৩৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সকাল ১০টার দিকে চরবিজয়ে পৌঁছান তারা।
চরে পৌঁছে তারা কেক কেটে চরবিজয়ের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উৎসবের উদ্বোধন করেন।
এ সময় বিশেষ দোয়া-মোনাজাত করেন কুয়াকাটা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মো. মাইনুল ইসলাম।
পরে কুয়াকাটার প্রখ্যাত বংশীবাদক রেজাউল করিম পাতার বাঁশি বাজিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করেন এবং কুয়াকাটা শিল্পীগোষ্ঠীর সদস্যরা মনোজ্ঞ সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
দুপুরে উপকূল থেকে নিয়ে যাওয়া সবজি, মাছ ও গরুর মাংস, সঙ্গে চর থেকে কেনা সাগরের মাছ এবং ভাত নিজেরা রান্না করে দুপুরের খাবার খান চরবিজয় সফরকারী ৭০ সদস্য। বিকালে ঘুড়ি উৎসবে অংশ নেন তারা।
দিনভর উৎসব সবাই বেশ উপভোগ করেছেন বলে জানান চরবিজয় সোসাইটির সমন্বয়ক রহমান আরিফ। সন্ধ্যায় দুটি ট্রলারযোগে কুয়াকাটার উদ্দেশে রওয়ানা হন তারা।
আরিফ জানান, ২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর সকাল ৮টার দিকে কুয়াকাটা সি ট্যুরিজম নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে ১৩ জন অনুসন্ধিৎসু নতুন কিছু একটা আবিষ্কারের জন্য বঙ্গোপসাগরে অজানার উদ্দেশে রওয়ানা দেন। পথিমধ্যে হাইরের চর নামে পরিচিত একটি চরের জেলেরা সাগরের আরও গভীরে একটি চরে কার্পেটের মতো লাল কাকড়া আর গাংচিলের মতো অসংখ্য পাখি উপস্থিতির খবর দেন তাদের। অতিআগ্রহে ওইদিন দুপুর ২টায় ওই চরে গিয়ে বিস্ময়ে অভিভূত হন তারা।
ট্রলার থেকে রান্নাবান্নার সামগ্রী নামিয়ে দুপুরের খাবার খাওয়ার পাশাপাশি জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও সহশিল্পীদের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে নতুন চর আবিষ্কার উৎসব উদযাপন করেন তারা। একই সঙ্গে বিজয়ের মাসে ওই চর আবিষ্কার হওয়ায় ‘চরবিজয়’ নামকরণ করেন তারা।
ওইদিনই কুয়াকাটা ফিরে বঙ্গোপসাগরের বুকে জেঁগে ওঠা চর সম্পর্কে উপকূলবাসীকে জানান তারা। এর ২০ দিন পর কুয়াকাটা পৌর মেয়র এবং স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে একটি দল ফের চরবিজয়ে গিয়ে উপকূলের উপযোগী সুন্দরী, আকাশমনি, ঝাউ ও গোল গাছ রোপন করেন তারা। এরপর থেকে গত ২ বছর ধরে চরবিজয় উৎসব করছেন তারা।
চরবিজয় সোসাইটির সমন্বয়কারী হোসাইন আমীর জানান, প্রতিবছর শীত মৌসুমে নভেম্বর থেকে এপ্রিল-মে পর্যন্ত পানি কম থাকায় চরটি জেঁগে ওঠে। আবার বর্ষায় তলিয়ে যায়। তবে গত দুই বছরে চরটি আরও প্রায় ১০ ফুটের মতো উচু হয়েছে পলি পড়ে। এখন আর বর্ষায়ও ডোবে না। জেলেরা সেখানে টং ঘর নির্মাণ করে থাকেন এবং সুটকি প্রস্তুত করেন।
প্রায় ১০০ একেরের বেশি আয়তনের অর্ধচাঁদ আকারের চরবিজয় ভাটার সময় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং প্রায় ৩ কিলোমিটার প্রশস্ত জমিন জেগে থাকে সব সময়। শীতের সময় জাঁগে পুরো প্রায় ১০০ কিলোমিটার জমিন।
সেন্ট মার্টিনের মতো নতুন আবিষ্কৃত চরবিজয় কুয়াকাটার ফাতরার চর বা গঙ্গারচর ছাপিয়ে এখন সব পর্যটকের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।
ভ্রমণকারীরা জানান, ২০১৭ সালে ওই চর আবিষ্কারের পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই চরবিজয়ে যাচ্ছেন পর্যটকরা। চলতি সপ্তাহেও ৮টি পর্যটক গ্রুপ ট্রলারে ওই চর ভ্রমণ করেছেন।
কুয়াকাটা ট্রলার মালিক সমিতির ব্যবস্থাপনায় শীত মৌসুমে প্রতিদিন সকালে চরবিজয়ের উদ্দেশে ছেড়ে যায় ট্রলার। জনপ্রতি ৫শ’ টাকা খরচে ২৫ থেকে ৩০ জন হলেই ট্রলার ছাড়ে চরবিজয়ের উদ্দেশে। দিনভর সেখানে অবস্থানের পর বিকালে আবার কুয়াকাটা উপকূলে ফিরে আসেন পর্যটকরা।
তবে মনুষ্যবিহীন ওই চরে গাছপালা, টয়লেট, পানি, বিদ্যুতর ব্যবস্থা না থাকায় পর্যটকদের নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে জানান চরবিজয় সোসাইটির সমন্বয়ক রহমান আরিফ।
সরকারের সুদৃষ্টি পড়লে সেন্টমার্টিনের মতো এই চরবিজয়েও দিনদিন পর্যটক বাড়বে বলে প্রত্যাশা করেন চরবিজয় সোসাইটির নেতারা।
বিডি প্রতিদিন/কালাম