লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় তিস্তা চরের শিক্ষক ও বিদ্যালয়ের সভাপতির দ্বন্দের জেরে একই নামে দুই স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা নিয়ে এলাকায় চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
সরেজমিনে তিস্তার চরে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার ঘোড়ামারা পশ্চিম হলদীবাড়ি এস ইউ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান করছেন শিক্ষকরা। শিক্ষার্থীরা হাতে পেয়েছে নতুন বই। ক্লাস রুমে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা করতে দেখা গেছে। অপরদিকে, ৫০০ গজ উত্তরে একই নামে আরও একটি মাদ্রাসা গিয়ে দেখা গেছে। সেখানে একটি নতুন ঘরের মেঝের উপর বসে কয়েকজন শিশু শিক্ষার্থী পড়াশুনা করতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে স্থানীয় হালিমুর রহমান (৪০) বলেন, এলাকায় একই নামে দুই মাদ্রাসা। কোনটা আসল কোনটা নকল বুঝি উঠতে পারছি না।
জানা গেছে, হাতীবান্ধা উপজেলার পাটিকাপাড়া ইউনিয়নের তিস্তা চর ঘোড়ামারা পশ্চিম হলদীবাড়ি এলাকায় শিক্ষা থেকে বঞ্চিত চরের শিশুদের জন্য ১৯৮২ সালে ইসলামী শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে ঘোড়ামারা পশ্চিম হলদীবাড়ি এস ইউ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা স্থাপন করেন। এরপর থেকে তিস্তা নদীর কয়েক দফা ভাঙ্গনের কবলে পরে মাদ্রাসাটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ২০১৩ সাথে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা সভাপতি আব্দুল গনি মৃত হলে ওই মাদ্রাসার সভাপতি নির্বাচিত হন আব্দুর রউফ (আদু)। ২০১৩ সালে মাদ্রাসার সভাপতি আব্দুর রউফ (আদু) ওই মাদ্রাসার জন্য সুপারসহ ৫ জন সহকারী শিক্ষক নিয়োগ প্রদান করেন। মাদ্রাসাটির কোড নম্বর ৫১৭৬৬। মাদ্রাসাটি ১৩০ জন কোমলমতি শিক্ষাথী নিয়ে মাদ্রাসাটি সুনামের সাথে পরিচালিত হওয়াসহ ২০১৬ সাল থেকে শিক্ষা সমাপনি পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে।
সম্প্রতি মাদ্রাসাটি ডিআর ভুক্ত জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে কাগজ পত্র চাইলে মাদ্রাসাটি সভাপতি আব্দুর রউফ (আদু) মাদ্রাসার সুপার শাহজাহান আলীকে নিজ বাড়িতে ডেকে নিয়ে কাজপত্র কেড়ে নিয়ে তিন শত টাকার ফাঁকা ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে নিয়োগকৃত সুপারসহ ৫ শিক্ষকের কাছে ২০ লক্ষ টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে চাকুরীচ্যুত করার হুমকি প্রদান করেন। এঘটনায় মাদ্রাসার সুপার শাহজাহান আলী হাতীবান্ধা নির্বাহী অফিসারকে একটি লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় থানায় সাধারন জিডি করেন।
এ ঘটনার পর ওই সভাপতি আব্দুর রউফ (আদু) উক্ত মাদ্রাসার ৫০০ গজের মধ্যে নিজের ভাই আব্দুর রশিদকে সভাপতি করে একটি নতুন ঘর উত্তোলন করে সুপারসহ ৫ সহকারী শিক্ষকে নিয়োগ দিয়ে রাতারাতি একই নামে আরেকটি এস ইউ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা স্থাপন করেন। এ নিয়ে দুই মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুর রউফ (আদু) ও মাদ্রাসার সুপার শাহজাহান আলী মধ্যে দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করাসহ এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
স্থানীয় বাসীন্দা আউয়াল হোসেন জানান, আমার বাবা আব্দুল গনি মারা যাওয়ার পর ওই মাদ্রাসার সভাপতি হন আব্দুর রউফ (আদু)। মাদ্রাসাটি ডিআর ভুক্তর জন্য শিক্ষা অফিস কাগজপত্র চাইলে আব্দুর রউফ (আদু) একই নামে আরও একটি মাদ্রাসা চালু করেন। ওই মাদ্রাসায় কোন শিক্ষার্থী নেই শুধু একটি ঘর তুলে সাইনবোর্ড লাগিয়ে মাদ্রাসা চালু করেন।
ইবতেদায়ী মাদ্রাসার সুপার শাহজাহান আলী বলেন, মাদ্রাসার সভাপতি আব্দুর রউফ (আদু) কৌশলে আমাকে তার বাড়িতে ডেকে নিয়ে আমার কাছ থেকে মাদ্রাসার কাগজপত্র ছিনিয়ে নিয়ে ৩০০ টাকার ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয় এবং নিয়োগ প্রাপ্ত ৫ শিক্ষকের কাজ থেকে ২০ লক্ষ টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে না পারলে চাকুরীচ্যুত করার হুমকি দেন। এ ঘটনায় আমি স্থানীয় থানায় একটি জিডি করি। হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে একটি লিখিত অভিযোগ প্রদান করি।
মাদ্রাসার সভাপতি আব্দুর রউফ (আদু) জানান, ওই মাদ্রাসা সুপারকে আমি বহিষ্কার করেছি এবং আমি ২০ লক্ষ টাকা চাইনি। তারা মিথ্যা ভাবে আমাকে হয়রানি করার জন্য এ ঘটনাটি সাজিছে। তিনি তার মাদ্রাসাটিকে বৈধ বলে দাবি করেন।
হাতীবান্ধা উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কর্পন্দ নারায়ন চন্দ্র রায় বলেন, একই নামে দুটি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার নিয়ে একটি বিরোধ চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সামিউল আমিন জানান, ওই মাদ্রাসার পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিডি-প্রতিদিন/ সিফাত আব্দুল্লাহ