নেদারল্যান্ড সরকারের সাহায্যে নির্মিত কুমিল্লার লাকসামের নরপাটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র রাজস্বখাতে অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় চিকিৎসা সেবার সুফল বঞ্চিত প্রায় লাখ খানেক মানুষ। দ্রুত উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত ও আধুনিকায়নের মাধ্যমে সুচিকিৎসা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৪ সালে নেদারল্যান্ড সরকারের সাহায্যে বাংলাদেশের ৪৩টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়। ওই অনুদানে লাকসাম পূর্ব ইউনিয়নের তৎকালীন সমাজসেবক মরহুম আবদুল মজিদ খানের দানকৃত ৭৫ সম্পত্তিতে ‘নরপাটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র’ স্থাপন করা হয়। পৃথক তিনটি ভবন নির্মাণের মাধ্যমে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হলেও বর্তমানে জোড়াতালি দিয়ে রোগীদের সেবা দেয়া হচ্ছে। চিকিৎসা কেন্দ্রটি পরিচালনার জন্য ১ জন মেডিকেল অফিসার, ১ জন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, ১জন ফার্মাসিস্ট ও ১জন এমএলএস পদ সৃষ্টি করা হলেও রাজস্বখাতে স্থানান্তরিত হওয়ায় জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া থমকে আছে।
এছাড়াও, সারাদেশে নেদারল্যান্ড সরকারের সাহায্যে নির্মিত ৪৩টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের মধ্যে ৪২টি ইতোমধ্যে রাজস্বখাতে অন্তর্ভুক্ত হলেও শুধুমাত্র নরপাটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এতে বিপুল সম্ভাবনা সত্ত্বেও লাখখানেক লোক চিকিৎসা সেবার সুফল বঞ্চিত রয়ে গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সুন্দর ও মনোরম পরিবেশে নরপাটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটির অবস্থান। বিশাল সম্পত্তিতে নেদারল্যান্ড সরকারের অনুদানে তিনটি ভবন নির্মাণ করা হয়। দীর্ঘদিন অযত্ন-অবহেলায় থাকায় ভবনগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। ভবনগুলোর দরজা-জানালা নষ্ট হয়ে যায়। তবে সাম্প্রতিক উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চারদিকে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণের পাশাপাশি একটি ভবনের কিছুটা সংস্কার করে চিকিৎসা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। প্রয়োজনীয় জনবল ও পর্যাপ্ত ওষুধ না থাকায় রোগীদের চাহিদামাফিক সেবা দিতে অসুবিধা হচ্ছে।
প্রেষণে উপ-সহকারি মেডিকেল অফিসার আবদুল্লাহ আল মামুন এবং পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা জ্যোতি প্রভা চাকমা ওই এলাকার দরিদ্র, অসহায় মানুষকে সপ্তাহের ছয়দিন চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন। তাদের মানবিক সেবায় রোগীরা খুশি। তবে বরাদ্দ কম থাকায় তারা প্রয়োজনীয় ওষুধ পান না বলে জানান।
উপ-সহকারি মেডিকেল অফিসার আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১৫০ জন রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। আমরা সর্বোচ্চ আন্তরিকতায় রোগীদের সেবা প্রদানে চেষ্টা করি। উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত হলে এলাকাবাসীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হবে।
লাকসাম পূর্ব ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আলী আহমেদ বলেন, বর্তমান সরকার মানুষকে উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদানে বদ্ধপরিকর। এরই ধারাবাহিকতায় নরপাটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটির ইতোমধ্যে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ ও ভবন সংষ্কারের মাধ্যমে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি দ্রুত রাজস্ব খাতে অন্তর্র্ভূক্তিতে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হবে বলে আমি আশাবাদী।
লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আবদুল আলী জানান, নরপাটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি রাজস্বখাতে অন্তর্ভুক্তির জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রেরণ করা হয়েছে। রাজস্বখাতে অন্তর্ভুক্তি হলে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসাসেবা চালু হবে।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন