জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে বগুড়া শহরের জিরো পয়েন্ট সাতমাথায় ক্ষণগণনা শুরু করা হয়েছে ১০ জানুয়ারি থেকে।
দিনটিকে স্মরণ করে রাখতে এবং মুজিববর্ষ যথাযথভাবে পালনে নির্মাণ করা হয়েছে মঞ্চ। এই মুক্তমঞ্চের নামকরণ করা হয়েছে মুজিবমঞ্চ। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কর্মসূচি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য এই মঞ্চ উন্মুক্ত থাকছে।
এদিকে সাংস্কৃতিক কর্মীরা এই মুজিবমঞ্চ স্থায়ীকরণের দাবি তুলেছে।
বগুড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানানো হয়েছে, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধায়নে ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ক্ষণগণনার আধুনিক ডিজিটাল মেশিন বসানো হয়েছে বগুড়া শহরের বীরশ্রেষ্ঠ স্কয়ারে।
ক্ষণগণনার পাশাপাশি সেখানে মুজিববর্ষের নানা কর্মসূচি বাস্তবায়নে ইট সিমেন্ট দিয়ে একটি মঞ্চ তৈরি করা হয়। মঞ্চের ঠিক পাশেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চ এর ভাষণের ছবি আছে। ডিজিটাল ইলেক্ট্রনিক মেশিনে গণনা চলছে ১০ জানুয়ারি থেকে। দিবস গণনার দিন থেকে ওই নতুন মঞ্চে মুজিববর্ষের ক্ষণগণনার আলোচনা সভা, মুজিববর্ষের গুরুত্ব তুলে ধরাসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, জেলা শিল্পকলার সাংস্কৃতিক কর্মীরা এতে অংশগ্রহণ করে।
সেদিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বগুড়া-১ আসনের সদ্য প্রয়াত সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান। সেদিন বক্তব্য দিতে গিয়ে আব্দুল মান্নান নতুন নির্মিত এই মঞ্চের নাম করণ করেন ‘মুজিব মঞ্চ’। মঞ্চটি স্থায়ীকরণের জন্য বলেন তিনি।
বগুড়ার সাংস্কৃতিক কর্মীরা এই দাবিটিকে আরও জোড়ালো করেছেন। সাংস্কৃতিক কর্মীরা বলছেন, মঞ্চটি স্থায়ী করে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক কর্মীদের জন্য নিয়মিত সুযোগ প্রদান করা হোক। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সংগঠনও সেখানে কর্মসূচি পালন করে মঞ্চটিকে সারা বছর সচল রাখার দাবি করে।
বগুড়া জেলা সদরে দুই একটি মঞ্চ থাকলেও সেখানে পৌরসভা থেকে রয়েছে বিধিনিষেধ ও দিগুণভাড়া, যা সাংস্কৃতিক কর্মীদের নাগালের বাইরে। এমতাবস্থায় সাতমাথায় নির্মিত মঞ্চটি স্থায়ী করার জন্য দাবি করা হয়েছে।
বগুড়া জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদ জানান, মঞ্চটির নামকরণ করা হয়েছে মুজিবমঞ্চ। বগুড়ার সাংস্কৃতিক কর্মীরা মঞ্চটি স্থায়ীভাবে রাখতে মৌখিকভাবে বলেছেন। মুজিবমঞ্চটি নিয়মতান্ত্রিকভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি স্থায়ীকরণের চেষ্টা করা হবে।
বগুড়া জয়বাংলা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক চপল সাহা জানান, কয়েকদিন আগে তাদের সংগঠন থেকে মুজিবমঞ্চে মুজিববর্ষ উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সেখানে কয়েক হাজার মানুষ অনুষ্ঠানে দর্শকশ্রোতা হয়ে আসেন। বঙ্গবন্ধুর উপর নিবেদিত আলোচনাও শোনেন। সাধারণ মানুষের মধ্যে সেদিন বিকাল থেকে রাত অবদি বঙ্গবন্ধুর জীবনী তুলে ধরে আলোকপাত করা হয়।
তিনি আরও জানান, সাংস্কৃতিক কর্মীরা যাতে সারাবছর এই মুজিবমঞ্চ খুব সহজে ব্যবহার করতে পারেন সে বিষয়ে দাবি জানানো হচ্ছে। তার নিজের সংগঠন ছাড়াও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন মুজিবমঞ্চে মুজিববর্ষের অনুষ্ঠান পরিবেশন করছে।
বগুড়া সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি তৌফিক হাসান ময়না ও সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ সিদ্দিকী জানান, বগুড়ার জিরো পয়েন্ট সাতমাথায় নতুন করে নির্মিত মুজিবমঞ্চটি স্থায়ী করনে জেলা প্রশাসক মহোদয়কে বলা হয়েছে। এই মঞ্চটি স্থায়ীকরণ করা হলে বগুড়ার সাংস্কৃতিক কর্ম আরও একধাপ এগিয়ে যাবে। অর্থের অভাবে কিছু সংগঠন কর্মসূচি পালন করতে পারে না। এই মঞ্চটি হলে অন্তত মঞ্চের খরচটি বেঁচে যাবে। এতে করে তারা ভালভাবে কাজ করার জন্য প্রেরণা পাবে। বগুড়ার উন্নয়নের স্বার্থে মঞ্চটি স্থায়ী করা হোক। তাছাড়া মুজিব শতবর্ষের সাথে এই মুজিবমঞ্চটিও একটি সাক্ষী হয়ে থাকবে।
বগুড়ার শব্দ কথণ সাহিত্য আসরের সমন্বয়কারী আব্দুস সালাম জানান, বগুড়ার সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড অত্যন্ত শক্তিশালী। সে কারণে যতটা সুবিধা পাওয়ার কথা ছিল তা অনেক সময় হয়ে উঠে না। মুজিব শতবর্ষ পালন উপলক্ষে নতুন নির্মিত মঞ্চটি স্থায়ী করার দাবি করেন।
এদিকে, এ বিষয়ে বগুড়ায় কর্মরত সিনিয়র সাংবাদিক জিয়া শাহীন তার ফেসবুকেও মঞ্চটি স্থায়ী করণের জন্য দাবি করেন।
বিডি প্রতিদিন/কালাম