মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে মেয়াদ পূর্তির পরও বন বিভাগ থেকে সামাজিক বনায়নের গাছ না কাটায় দুর্ভোগে পড়েছেন উপকারভোগীরা। দীর্ঘ দশ বছর বিভিন্ন সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে তারা এসব গাছ পরিচর্চা ও পাহারা দিয়েছেন। আশা ছিল লভ্যাংশের টাকা দিয়ে সেই ঋণ পরিশোধ করবেন। কিন্তু তাদের সেই আশায় এখন গুড়ে বালি। মেয়াদ পূর্তির পর সেই গাছ কাটতে এখন টালবাহানা করছে বন বিাভাগ।
মঙ্গলবার স্থানীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা বলেন উপকারভোগী মো. গোলাম মোস্তফা।
তিনি লিখিত বক্তব্য বলেন, তারা কালাপুর গ্রামের ৩১ জন উপকারভোগী ২০০৭-২০০৮ সালে বন্যপ্রাণি ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন চাউতলী বনবিটে ৩০.৩৭ হেক্টর ভূমিতে বনজ, কৃষিজ, ফলজ বৃক্ষ রোপন করেন। যার মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৮ সালের ১ জুলাই। চুক্তি অনুসারে ১০ বছর পর এসব বিক্রি করে বিক্রয়লব্ধ অর্থের শতকরা ৪৫ ভাগ বন অধিদপ্তর, শতকরা ৪৫ ভাগ উপকারভোগী আর বাকি শতকরা ১০ ভাগ ট্রি ফার্মিং ফান্ডে জমা হবার কথা।
বন বিভাগের সাথে তাদের সামাজিক বনায়নের চুক্তির পর থেকেই তারা গাছ ও সরকারের সংরক্ষিত বনাঞ্চল রক্ষায় নিজেদের অর্থে নৈশ চৌকিদার নিয়োগ করেন। উপকারভোগীরা নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করে নৈশ চৌকিদারদের নিয়ে দিন-রাত পাহারা দেন। গত ১০ বছরে এই বন বিটের তাদের সামাজিক বনায়নের একটি শতবর্ষী বা পুরাতন গাছ চুরির কোনো রেকর্ড নেই।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে তাদের এই বনায়নে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় সাত হাজার গাছ রয়েছে। এর মধ্যে বনের প্রাণিদের খাদ্য যোগান দেয় এমন গাছ রেখে অন্য গাছ গুলো কাটার জন্য তারা স্থানীয় বন বিভাগকে বলেছে। কিন্তু দীর্ঘ ১৯ মাস ধরে গাছ গুলো কাটা হচ্ছে না। উপকারভোগী দরিদ্র জনগোষ্ঠী তাদের সর্বস্ব দিয়ে এই বনায়ন সৃজন করেছেন। এটিকে কেন্দ্র করেই তাদের জীবন-মান পরিচালিত। অনেকেই বাগান রক্ষা করতে নানা সমিতিসহ বিভিন্ন ভাবে ঋণগ্রস্ত হয়েছেন। এসব ঋণের শোধ করতে অনেক পরিবার গাছ বিক্রয়লব্ধ শতকরা ৪৫ ভাগ টাকার অপেক্ষায় দিনানিপাত করছেন। দীর্ঘ ১৯ মাস ধরে নানা অজুহাতে তাদের সামাজিক বনায়নের গাছ কর্তন না করায় অনেক পরিবার এখন প্রায় নিঃস্ব হয়ে পরেছেন।
তাই বন ও পরিবেশ মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য নিকট তারা দ্রুত গাছ গুলো কাটার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন জানান। সাংবাদিক সম্মেলনে ৩১ জন উপকারভোগী উপস্থিত ছিলেন।
বন্যপ্রাণি ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘উপকারভোগীরা ন্যাচারাল গাছের ভেতরই বাগান করেছিল। এখন যদি তারা ন্যাচারেল গাছ রেখে তাদের সৃজন করা গাছ কাটতে চায় তা হলে আমাদের কোনোঅসুবিধা নেই। তারা আবেদন দিলেই আমরা কাটতে দেব।’
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন