লালমনিরহাটে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে, ব্যারেজ পয়েন্টে পানি কমলে ভাটিতে পানিবন্দি হয়ে পড়ছে প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ। গত ৫ দিন ধরে পানিবন্দি হয়ে থাকলেও এসব ভুক্তভোগী মানুষের অধিকাংশই এখনও পাননি ত্রাণ সহায়তা, এমনটাই দাবি তাদের।
ভারী বর্ষণ ও তিস্তা ধরলার পানি আসা যাওয়ার খেলায় অসহায় হয়ে পড়েছে নদী পাড়ের হাজারো মানুষজন। উজানের ঢলে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় লালমনিরহাটের ৫ উপজেলার নদী তীরবর্তী ১৭টি ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। প্রায় ১২'শ হেক্টর পাট, ভুট্টা ও চিনা বাদাম ক্ষেত তলিয়ে গেছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান এখনো নির্ধারণ করতে পারেনি কৃষি বিভাগ। এদিকে পানিবৃদ্ধির সাথে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙ্গন। গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা ধরলার ভাঙ্গনে ৩৭টি বসতবাড়ী নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে বলে জানিয়েছে লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম। তিস্তার তীব্র পানির স্রোতে হাতিবান্ধার গড্ডিমারীতে ভেঙ্গে গেছে দেড়'শ মিটারের একটি বালুর বাধ।
দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি সোমবার সকাল থেকে বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলার পানি কুলাঘাট পয়েন্টে ১৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে। গত শুক্রবার থেকে তিস্তার নদীর পানি একই পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার বিপদসীমা ৫২ দশমিক ৬০ মিটার। বর্তমানে পানির প্রবাহ চলছে ৫২ দশমিক ৬২ মিটার। তবে সকাল থেকে পানি কমে বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তার ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সর্তকীকরণ কেন্দ্র বিষয়টি নিশ্চিত করে জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা অববাহিকায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৬৫ মিলিমিটার।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানিয়েছেন, তিস্তার পানি সোমবার সকালে বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি নিয়ন্ত্রণে ব্যারেজের সবগুলো গেট খুলে দেয়া হয়েছে। তিস্তা ব্যারাজের ফ্লাড বাইপাস (ফ্লাড ফিউজ) এর কাছে ঢলের পানি এখনো ৪ ফিড নিচে থাকায় লাল সংকেত জারির পরিস্থিতি হয়নি। তবে হলুদ সংকেতের মাধ্যমে তিস্তাপাড়ের মানুষজনকে নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে তিস্তা নদীতে সৃষ্ট বন্যায় তিস্তা ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার বেশকিছু এলাকায় নদীর পানি ঢুকে পড়েছে। ওইসব এলাকার অনেক বসতবাড়িতে পানি উঠেছে। এতে লোকজন পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
জেলার মহিষখোচা,গড্ডিমারী, সিন্দুনা,খুনিয়াগাছ,রাজপুর, কুলাঘাট, ভোটনারী, সানিয়াজান ইউনিয়নের বানভাষী মানুষগুলো জানান, পানিবন্দি হয়ে খেয়ে না খেয়ে থাকলেও সরকারি কিংবা বেসকারি কোন সাহায্যই জোটেনি তাদের ভাগ্যে।
উপজেলার সিঙ্গিমারী ইউপির চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন বলেন, যেভাবে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে করে এই ইউপির মানুষ অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ জন্য তিনি ওই এলাকার পানিবন্দি মানুষদের খোঁজ-খবর নিতে সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সহযোগিতা কামনা করেন। সেই সঙ্গে পানিবন্দি এসব লোকজনদের সরকারি সাহায্যের আবেদনও জানান তিনি।
আদিতমারীর মহিষখোচা ইউপি চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন জানান, প্রতিদিনই তিস্তার পানি বাড়ছে, সে সাথে দেখা দিয়েছে ভাঙ্গন। তিনি জানান, তার ইউনিয়নের ৬ হাজার পরিবার ৪ দিন থেকে পানিবন্দি হয়ে থাকলেও এখনও মেলেনি তেমন সাহায্য সহযোগীতা।
অন্যদিকে পানি বাড়ার সাথে সাথে তিস্তা ধরলায় দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙ্গন। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৩৭টি বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে। লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, ভাঙ্গন প্রতিরোধে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। কর্মকর্তারা সার্বক্ষনিক বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।
এদিকে হাতিবান্ধার গড্ডিমারী ইউপি চেয়ারম্যান আতিয়ার রহমান জানান, সোমবার ভোরে তিস্তার তীব্র পানির স্রোতে তার ইউনিয়নের দেড়'শ মিটার বালুর বাধ ধসে গিয়ে নতুন করে আড়াইশ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক মোঃ আবু জাফর জানান, তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নিমম্নঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকায় ৬ লাখ ২৬ হাজার টাকা ও ৮০ মে.টন জিআরের চাল বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, সরকারি হিসাব মতে জেলায় প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। তবে ত্রাণ সামগ্রীর ঘাটতি নেই বলে তিনি দাবি করেন।
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ