পঞ্চগড় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চত্বরে প্রকাশ্যে বাদী পক্ষের লোকজনকে মারধর করে আহত করেছে আসামিরা। একটি ফৌজদারী মামলার প্রধান কয়েকজন আসামিকে জেল হাজতে প্রেরণ করার কারণেই বাকি আসামি ও তাদের লোকজন বিচার প্রার্থী তিন নারী এবং একটি শিশুকে মারধর করে রাস্তায় ফেলে দেয়।
মঙ্গলবার দুপুরে পঞ্চগড় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চত্বরে এ ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন-পঞ্চগড় সদর উপজেলার টুনিরহাট বানিয়াপাড়া এলাকার মকছেদুর রহমানের স্ত্রী আজিমা খাতুন (২৮), তার প্রতিবন্ধী মেয়ে মারিয়া শেখ (৫), আজিমার মা সকিনা বেগম (৫০) ও খালা আরজিনা বেগম (৪৫)।
আদালতে তাদের করা এক মামলায় বিবাদী পক্ষের দুজনের জামিন নামঞ্জুর করে আদালত জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিলে ক্ষুব্ধ হয়ে বাদী পক্ষের ওই তিন নারী ও এক শিশুকে মারধর করে আসামি পক্ষের লোকজন।
আদালত চত্বরে আহত অবস্থায় বেশ কিছু সময় পড়ে থাকলেও কেউ তাদের হাসপাতালে নেওয়ার উদ্যোগ নেয়নি। পরে আদালত চত্বরে থাকা লোকজনের সহযোগিতায় পুলিশ তাদের উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।
আহত নারীরা জানান, গত ৪ ফেব্রুয়ারি বাড়ির গাছের ডালপালা কাটাকে কেন্দ্র করে পঞ্চগড় সদর উপজেলার টুনিরহাট বানিয়াপাড়া এলাকার মকছেদুর রহমান ও প্রতিবেশী আজিরত ইসলামের পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এসময় মকছেদুরের পরিবারের বেশ কয়েকজন আহত হন। ১০ ফেব্রুয়ারি মকছেদুর বাদী হয়ে আজিরতসহ আটজনের নামে আদালতে মামলা করেন।
ওই মামলায় মঙ্গলবার আদালতে আত্মসমর্পণ করে আসামিরা জামিন আবেদন করলে আদালত আজিরত ও রয়েল নামের দুই আসামির জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন এবং বাকি আসামিদের জামিন মঞ্জুর করেন। আদালত প্রধান দুই আসামির জামিন নামঞ্জুর করে তাদের জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিলে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন আসামি পক্ষের লোকজন।
এসময় আসামি পক্ষের আনোয়ার হোসেন, তার স্ত্রী শ্রুতি বেগম এবং তার বোন রুবিনা খাতুন বিরোধী পক্ষের তিন নারী ও এক শিশুকে মারধর করেন। একপর্যায়ে আহত হয়ে তারা আদালত চত্বরে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। বেশ কিছু সময় পর আদালতে নিয়োজিত পুলিশ তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। এসময় পুলিশ আসামিপক্ষের রুবিনা খাতুন (৩৩) নামের এক নারীকে আটক করলেও বাকিরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় পঞ্চগড় সদর থানায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে।
আহত নারী ও বাদী মকছেদুর রহমানের স্ত্রী আজিমা খাতুন বলেন, আজ মামলার শুনানি থাকায় আমরা আদালতে উপস্থিত ছিলাম। আদালত প্রধান দুই আসামির জামিন নামঞ্জুর করার পর যখন আমরা ভবন থেকে বের হচ্ছিলাম তখন তাদের পক্ষের আনোয়ার, তার স্ত্রী শ্রুতি ও তার বোন রুবিনা আমাদের টেনেহিচড়ে আদালত চত্বরে নিয়ে সবার সামনেই আমাদের মারধর করে। এমনকি আমার প্রতিবন্ধী মেয়েটিকেও ছাড়েনি তারা। আমরা চিৎকার করছিলাম কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি। পরে পুলিশ আমাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।
পঞ্চগড় আদালতের পরিদর্শক মকবুল হোসেন বলেন, ঘটনার সাথে সাথেই আমরা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করার ব্যবস্থা করি। একই সাথে এক নারীকে আটক করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশকে জানিয়েছি। এখন তারা আইনগত ব্যবস্থা নেবে।
পঞ্চগড় সদর থানার উপ-পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ওই ঘটনায় এক নারী আটক রয়েছে। এ বিষয়ে থানায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই