গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের সিরাজপুর গ্রামে বিধবা নারী মমতাজ বেগম ও তার মেয়ে ঝুমাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় মামলার আসামিরা জামিনে বেরিয়ে এসে বাদীকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই ঘটনায় মমতাজ বেগম বাদী হয়ে গত বুধবার (১০ মার্চ) বিকেলে কালিয়াকৈর থানায় একটি সাধারন ডায়েরি করেছেন।
পুলিশ জানায়, উপজেলার সিরাজপুর এলাকার মনির হোসেনের মেয়ে মুক্তা, আলী আক্কাবর ওরফে পাতিরার ছেলে শফিকুল ইসলাম
সবুজের সুদের টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় সম্প্রতি একটি কাঁঠাল গাছের সাথে বেঁধে নিযার্তন করে ওই মা ও মেয়েকে। এ ঘটনায় মমতাজ বেগম নির্যাতনের শিকার হয়ে কালিয়াকৈর থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় গত ৭ মার্চ আসামি মুক্তা আক্তার জামিনে বের হয়ে এসে বাদী মমতাজ বেগমকে খুন জখমের হুমকি দিয়ে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে।
ওই দিন সন্ধ্যায় গাজীপুর আদালত থেকে বাড়ী ফেরার পথে করিম হাজীর টেকের পাশের সড়কে পৌঁছালে পূর্ব থেকে ওৎ পেতে থাকা ওই আসামীরা মমতাজকে চতুর্দিকে ঘিরে ধরে। পরে শফিকুল ইসলাম সবুজ ও মুক্তার আক্তার নামে দুই আসামি বাদী মমতাজ বেগমকে এলাকা ছেড়ে চলে যাবার কথা বলে হুমকি দিয়ে কিল ঘুষি মারিতে থাকে। এসময় মমতাজ বেগম ডাক-চিৎকার দিলে
এলাকাবাসী ঘটনাস্থলে আসে। এসময় আসামিরা পালিয়ে যায়।
নির্যাতিতা মমতাজ বেগম বলেন, ওই এলাকার ইউপি সদস্য ইব্রাহিম আমাকে বাঁধার হুকুম দিয়েছিল। বর্তমানে বাড়ি থেকে বের হতে দেয় না। এক ঘরে করে রাখতে চায়। তারা মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে। বাড়ি বিক্রি ও নানাভাবে হয়রানি করছে। প্রথমবার মামলা দিলে আসামিরা জামিন পেয়ে যায়। পরে আদালতের নির্দেশে আবার মামলা দিলে ৭ মার্চ শিল্পি, কুলসুম ও শরীফাকে জেলহাজতে প্রেরণ করে। মুক্তা বর্তমানে জামিনে রয়েছে। বর্তমানে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইব্রাহিম সিকদার জানান, এরকম কোন ঘটনা কেউ জানায়নি। আমি কোনো হুমকি দেই নাই। ওদের সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ নেই। ঘটনা সত্য নয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই মোয়াজ্জেম জানান, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, নানা অভাব-অনটনের মধ্যে কোনও রকমে বিধবা নারী মমতাজ বেগম ও তার মেয়ের সংসার চলছে। কিন্তু তাদের সংসারে হানা দেয় একটি প্রতারক চক্র। স্থানীয় গফুর ড্রাইভার ও মনির হোসেনের পরিবারসহ বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে সুদে টাকা নেয়
মমতাজ বেগম। এরই মধ্যে প্রায় দুই মাস কাটতে না কাটতেই সুদের টাকা আদায় করতে বিভিন্ন ধরণের হুমকি দেন। এ বিষয় নিয়ে গত মাসের ১ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায় স্থানীয় ইউপি সদস্য ইব্রাহীম সিকদার মধ্যস্থতা করে সুদের টাকা পরিশোধের জন্য এক মাসের সময় নির্ধারন দেন।
নির্ধারিত সময় শেষ না হতেই গত ১১ ফেব্রুয়ারী সুদখুর গফুর ড্রাইভার, তার স্ত্রী কুলসুম বেগম, ছেলে রিপন হোসেন এবং সুদক্ষুর মনির হোসেন ও তার স্ত্রী শিল্পী বেগম, মেয়ে মুক্তা আক্তার, ছেলে শহিদ হোসেন, স্থানীয় নয়ন হোসেন বিধবা মমতাজ বেগমের বাড়ি ঘেরাও করে। এসময় তারা সুদের টাকা আদায় করতে বিধবা মমতাজ বেগমকে একটি গাছের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে মারধর করতে থাকে। মাকে মারধরের হাত থেকে বাঁচাতে ১০ম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে ঝুমা এগিয়ে গেলে তাকেও একই গাছে বেধে নিযার্তন করে। পরে গ্রামবাসী ও একজন ইউপি সদস্য গিয়ে গিয়ে বিধবা মা ও মেয়েকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ সিফাত