পাখি আসছে, পাখি যাচ্ছে। এ ডালে সেই ডালে উড়ছে। কিচির মিচির শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার গড়ফতেপুর গ্রামে গড়ে সরকারিভাবে তোলা বারামখানা। পথচারিদের জন্য বিশ্রামখানা গড়ে তোলা স্থানের নাম দেওয়া হয়েছে বারামখানায়। আর এই বারামখানাটি এক বিঘা জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে। শতাধিক বিভিন্ন ফলজ ও বনজ গাছ লাগিয়ে সবুজায়ন করা হয়েছে। আর বৃক্ষের ডালে ডালে প্রায় অর্ধশত কলস বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর এই কলসের মধ্যেই সংসার পেতেছে পাখিরা।
জানা যায়, বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার গড়ফতেপুর গ্রামসহ আরও তিনটি গ্রামের মানুষকে রক্ষায় স্বাধীরতার সময় মাটি দিয়ে উচুঁ করে দেয়ালের মতো করে নির্মাণ করা হয়। যেন বহিশত্রু থেকে সহজে রক্ষা পাওয়া যায়। সেকারণে পূর্বে থেকেই এলাকাটি একটু নিরব। যদিও কালের পরিবর্তনে সেই দেয়াল আর নেই। কিন্তু গাছগাছালি ঠিকই ছিল। সেই গাছগাছালি ও ছায়া ঘেরা এলাকাটিকে পথচারিদের বিশ্রামের জন্য বছরখানেক আগে স্থাপন করা হয় চৌচালা বিশ্রামখানা ‘বারামখানা’।
স্থানীয় লালন গবেষক ড. আজাদুর রহমানের সহযোগিতায় সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার শফিকুর আলমের তত্ত্বাবধানে সরকারিভাবে প্রতিষ্ঠা করা হয় বিশ্রামের জন্য ‘বারামখানা’। বারামখানার পাশেই রয়েছে বিশাল মাঠ। মাঠে মাঠে কৃষক ফসল ফলায়। আর তার চারপাশ ফুল ফলের বৃক্ষরাজি দিয়ে ভরে উঠেছে। প্রকৃতিকভাবেই নৈসর্গিক স্থান হিসেবে ‘বারামখানা’ গড়ে উঠেছে। পথচারিদের বিশ্রামাগার ‘বারামখানা’ প্রতিষ্ঠার পর সেটিকে ঘিরে চারদিকে থাকা গাছগুলোতে পাখির বাসা লাগানোর পরিকল্পনা করে স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠন ‘পরিবেশ উন্নয়ন পরিবার’। সেখানে পাখিদের অবাধ বিচরণের জন্য আরো কিছু গাছ রোপণ করা হয়। পাখিদের নিরাপদে বসবাসের জন্য মাটির কলসি গাছে বেঁধে দেওয়া হয়। সেই কলসির মধ্যে বেশ কিছু পাখি খড়কুটো দিয়ে বাসা বেঁধেছে। অল্পদিনেই পাখিদের প্রাকৃতিক অভয়ারণ্যে পরিণত হয় বারামখানা। এখন সেখানে চোখে পড়ে খড়কুটো মুখে নিয়ে পাখিদের জন্য তৈরি করা আবাস-মাটির কলসিতে তাদের অবাধ বিচরণ, পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ। প্রতিদিন বারামখানায় পাখিদের এ অভয়ারণ্যে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন পাখি। পাখিগুলো কলসেই বসবাস করছে। আবার কোন কোন পাখি গাছের ডালে নতুন করে বাসা বেঁধেছে। পাখিগুলো যেন বারামখানার কলসে সংসার গড়ে তুলেছে।
বগুড়ার সোনাতলা উপজেলাসহ আশপাশের উপজেলাগুলোতে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘পরিবেশ উন্নয়ন পরিবার’ এর সভাপতি ইমরান এইচ মণ্ডল জানান, ‘পরিবেশ-প্রতিবেশ সুন্দর রাখতে ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে আমাদের এ উদ্যোগ। যেহেতু বারামখানা চত্বরটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত একটি স্থান এবং আগে থেকেই এখানে পাখিদের বিচরণ রয়েছে সেখানে গঠনের মাধ্যমে পাখিদের বৃহৎ অভয়াশ্রম করা চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার প্রভাষক ইকবাল কবির লেমন জানান, আগের থেকে এখন ওই গ্রামে অনেক বেশি পাখি আসে। আগে এত পাখি দেখা যেত না। পাখিগুলো সকালে আর সন্ধ্যার আগে সবচেয়ে বেশি কিচির মিচির করে। বাকি সময় পাখিগুলো বিভিন্ন মাঠে মাঠে খাবার সংগ্রহে ব্যস্ত থাকে। এলাকার মানুষও পাখিগুলোর যত্ন নেয়। ছোট বড় কেউ পাখিগুলোকে আঘাত করে না। বিশ্রামাগারে সকলেই বসতে পারে।
বিডি প্রতিদিন / অন্তরা কবির