আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের দ্বিতীয় লাইফ লাইন দেশের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক বন্দর মোংলায় ৭০ বছরের মধ্যে বাণিজ্যিক জাহাজ আগমনে সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। করোনা মহামারির মধ্যেও চলতি অর্থ বছরের ১ মাস বাকি থাকতেই অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ৯১৩টি বাণিজ্যিক জাহাজ নোঙর করেছে এই বন্দরে। আর মাত্র ৮৭টি জাহাজ ভিড়লেই এক হাজার জাহাজ নোঙর করে নতুন মাইলফলক স্পর্শ করবে মোংলা বন্দর। মোংলা বন্দরের ৭০ বছরের মধ্যে বাণিজ্যিক জাহাজ আগমনে সব রেকর্ড ভাঙার পাশাপাশি পন্য ওঠানাম ও রাজস্ব আদায়েও রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ এতথ্য নিশ্চিত করেছে।
দেশের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক বন্দরটি হচ্ছে বিশ্বের একমাত্র সামুদ্রিক বন্দর, যে বন্দরের সাথে এখনো নেই কোনো রেল যোগাযোগ। এমনকি রাজধানী ঢাকা থেকে সড়ক পথে এই বন্দরটি ব্যবহার করতে পদ্মা নদী প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। উচু কনটেইনারগুলো লড়িতে করে ফেরী পারাপারে ঝুঁকি নিতে চায় না আমদানি-রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীরা। এই অবস্থায় মোংলা বন্দর ব্যবহার করতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলে আমদানি-রপ্তানিকারকরা। এমন অবস্থায়ও প্রাণঘাতি করোনা মহামারির মধ্যে বিশ্ব অর্থনীতিতে যখন ধস নেমেছে, ঠিক সেই সময় উল্টো চিত্র দেখা মিলেছে মোংলায়।
বঙ্গোপসাগর থেকে ৭৫ নটিক্যাল মাইল দূরে বাগেরহাট জেলার মোংলায় পশুর নদীর তীরে এই বন্দরটি প্রতিষ্ঠার ৭০ বছরের অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে চলতি অর্থ বছরের ১ মাস বাকি থাকতেই ৯১৩টি বাণিজ্যিক জাহাজ আগমন করেছে এই বন্দরে। যেখানে গত অর্থ বছরে বন্দরে জাহাজ ভিড়েছিল ৯১২টি। চলতি অর্থ বছরে কার্গো হ্যান্ডেলিং’এ ১২.৬৫ লাখ মেট্রিক টন পণ্যসহ কনটেইনার হ্যান্ডেলিং করেছে ৩৯ হাজার ৭৭৭ টিইউজ। সব মিলিয়ে চলতি অর্থ বছরে খালাস হবে ৩ কোটি ৬৩ লাখ মেট্রিক টন ও ৩৪০ কোটি রাজস্ব আয় হবে বলে আশা করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
মোংলা বন্দরের বোর্ড ও জনসংযোগ বিভাগের উপসচিব মো. মাকরুজ্জামান বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার আগে মৃতপ্রায় মোংলা বন্দর এখন শুধু লাভজনক বন্দরই নয়, এখন প্রতিবছর সৃষ্টি করছে নতুন-নতুন রেকর্ড। চলতি অর্থবছরে মোংলা বন্দরে এক হাজার জাহাজ আগমন করবে। এখনও অর্থবছর শেষ হতে একমাস বাকি। চলতি অর্থ বছরের প্রথম ছয় মাসে মোংলা বন্দরে জাহাজ এসেছে ৫১৯টি। ১১ মাসে জাহাজ আগমনের সংখ্যা ৯১৩টি। বিগত ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে মোংলা বন্দরে জাহাজ এসেছিল ৯১২টি। আমরা সে রেকর্ড করোনারকালে ১১ মাসেই ভেঙে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছি। আর চলতি জুন মাসে ৮৭টি জাহাজ বন্দরে ভিড়লেই এক হাজারের মাইলফলক স্পর্শ করবে মোংলা বন্দর। মোংলা বন্দর প্রতিষ্ঠার ৭০ বছর পার হলেও এত বিপুলসংখ্যক জাহাজ বন্দরে আসেনি। মোংলা বন্দরের ৭০ বছরের মধ্যে বাণিজ্যিক জাহাজ আগমনে সব রেকর্ড ভাঙ্গার পাশাপাশি ১১ মাসে পন্য ওঠানাম ও রাজস্ব আদায়েও গত অর্থ বছরের ৩৩৮ কোটি টাকার রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা বলেন, সরকারের ভিশন বাস্তবায়নে মোংলাকে আধুনিক বন্দরে রুপান্তর করতে আউটার বার ও বন্দরের পশুর চ্যানেলে ড্রেজিং, ওয়াটার টিট্রমেন্ট প্লান্ট স্থাপন, কনটেইনার ইয়ার্ড সংস্কার ও ভ্যাসেল ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের উন্নয়নসহ বেশ কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এতে করে মোংলা বন্দরের সক্ষমতা কয়েকগুন বেড়েছে। করোনার সংক্রমণের কারণে বিশ্বের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে স্থবিরতা নেমে আসলেও মোংলা বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখা হয়েছে। করোনার ধাক্কা সামলিয়ে এ বন্দরের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে করনীয় সবকিছুই করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ ২৪ ঘণ্টা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুল্লী, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালামাল ও ঢাকা মেট্রোরেলের কোচসহ বড়-বড় মেগা প্রকল্পের মালামাল মোংলা বন্দরে খালাস হচ্ছে। আমাদের কার্যক্রমে সন্তুষ্ট হয়ে বন্দর ব্যবহারকারীরা এ বন্দর ব্যবহারে আকৃষ্ট হয়েছেন। এসব কারণে করোনা মহামারির মধ্যেও রেকর্ড সংখ্যক জাহাজ আগমনের পাশাপাশি মোংলা বন্দরের রাজস্ব আয়ও বেড়েছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল