আসন্ন দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচন টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে ১১ নভেম্বর সাত ইউপিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নৌকার কর্মী-সমর্থকদের হাতে বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা হামলা-ভাঙচুরের শিকার হচ্ছে। এছাড়া পোষ্টার ছেঁড়া, প্রচারণায় বাধা, মাইক ছিনিয়েনেয়াসহ ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ রয়েছে। এসব কারণে বিদ্রোহী প্রার্থীরা মামলা ও অভিযোগ দিয়েছেন। নানা অপ্রীতিকর ঘটনার মধ্যেই শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে প্রচার-প্রাচারণা। ইউনিয়নবাসীর দাবি সুষ্ঠু নির্বাচন। তবে, এ নির্বাচনে রয়েছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আংশকা।
সাত ইউনিয়নের মধ্যে ভোট ছাড়াই জয় পেয়েছেন তিনজন চেয়ারম্যান। বাকি চার ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে ১৮ জন প্রার্থী নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন। মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
চার ইউপিতে যারা প্রতিদ্বদ্ধিতা করছেন তারা হলেন পাইস্কাতে আ’লীগের আব্দুল মান্নান, স্বতন্ত্র জাহাঙ্গীর আলম বাবুল, আরশেদ আলী রাসু, শফিকুল ইসলাম, রইস উদ্দিন রাঙ্গা ও আ. জলিল। যদুনাথপুরে আ’লীগের মীর ফিরোজ আহমেদ, স্বতন্ত্র কামরুজ্জমান টিটু, খলিলুর রহমান, রকিবুল হাসান তরফদার, আমজাদ হোসেন ও মো. আব্দুল আজিজ। ধোপাখালীতে আ’লীগের মো. আকবর হোসেন, স্বতন্ত্র কামাল হোসেন তালুকদার মিন্টু, খোরশেদ আলম। বানিয়াজানে আ’লীগের মো. রফিকুল ইসলাম তালুকদার ফটিক, স্বতন্ত্র মাসুদ আলম তালুকদার ও মো. খোকন মিয়া।
পাইস্কা ইউপির স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বাবুল জানান, আমার প্রচারণার মাইক ছিনিয়ে নিয়ে ভেঙে ফেলেছে এবং পোষ্টার ছিঁড়াসহ প্রচারণায় বাধা দিচ্ছে নৌকার কর্মীরা। একই অভিযোগ তুলে আরশেদ আলী রাসু জানান, নৌকার কর্মীরা আমার নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর ও পোষ্টার ছিড়ে ফেলেছে। এসব বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তবে, নৌকার প্রার্থী আব্দুল মান্নান সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন।
যদুনাথপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থীর বাড়ীতে হামলা চালানো, পোষ্টার ছেঁড়া ও নানা ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ তুলেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। বিষয়টি অস্বীকার করেন নৌকার প্রার্থী মীর ফিরোজ আহমেদ।
স্বতন্ত্র প্রার্থী মাসুদ আলম তালুকদার জানান, নোমান নামের আমার এক কর্মীকে পিটিয়ে আহত করে নৌকার কর্মীরা। এরআগে তাঁরা লাঠি-সোটা নিয়ে মিছিল-শোডাউন করে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। তবে, নৌকার প্রার্থী মো. রফিকুল ইসলাম তালুকদার ফটিক সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন।
অপরদিকে, ধোপাখালীতে নির্বাচন নিয়ে নৌকার প্রার্থী আকবর হোসেন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কামাল হোসেন তালুকদার মিন্টুর কর্মী সমর্থকদের মধ্যে চলছে উত্তেজনা। হয়েছে গাড়ী, মোটরসাইকেল ভাংচুর ও রক্ষ ক্ষয়ী সংঘর্ষ। হয়েছে হামলা-মামলা। স্বতন্ত্র প্রার্থী কামাল হোসেন তালুকদারের কর্মী বাবুল আকন্দের উপর নৌকার প্রার্থী আকবরের ছেলের নেতৃত্বে হামলা চালিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। তাঁকে উদ্ধার করে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় কামাল হোসেন তালুকদার মিন্টু বাদি হয়ে আকবর হোসেনের ছেলেসহ ছয় জনের নাম উল্লেখ করে ধনবাড়ী থানায় মামলা দায়ের করেন। তবে, হামলার ঘটনা অস্বীকার করেন আকবর।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে প্রচারণা। ব্যস্ত সকল প্রার্থী-কর্মী ও সমর্থকরা। চলছে মিছিল-মিটিং ও মাইকিং। সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মাঝে চলছে নানা গুঞ্জন।
ধোপাখালী ইউনিয়নের ভোটার ফরহাদ আলী ও হাকিম শেখ জানান, যে নির্বাচনী হাওয়া বর্তমানে বইছে তাতে লক্ষণ ভালো না। বিভিন্ন প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের মধ্যে চলছে উত্তেজনা। যদুনাথপুরের ভোটার রমজান আলী, আ. ছামাদ ও রেনু বেগম জানান, এবার সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কিনা সন্দেহ রয়েছে।
ধনবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. চান মিয়া জানান, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য পুলিশ প্রশাসন কাজ করছে। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা করুনা সিন্ধু চাকলাদার জানান, অভিযোগ পাওয়া মাত্র ববস্থা নেয়া হচ্ছে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাদিয়া ইসলাম সীমা জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালতের টিম মাঠে কাজ করছে। যারা আচারণবিধি লঙ্ঘন করছেন তাঁদের জরিমানা করা হচ্ছে।
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গণি জানান, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য মাঠে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে। ভোটাররা নিজ কেন্দ্রে নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবে। কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে দেয়া হবে না।
বিডি প্রতিদিন/এএ