নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার শত বছরের খ্যাত চাঁদখানা ইউনিয়নের বগুলা গাড়ি সাতনালা গ্রামটি ডালের বড়া গ্রাম হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। ওই গ্রামের ১৫ থেকে ২০টি পরিবার ডালের বড়ায় স্বপ্ন বুনেন বছর জুড়ে। এজন্য নারীরা নিত্যদিন ভোরের আলো ফোটার আগেই ভিজিয়ে রাখা মাষকলাইয়ের খোসা ছাড়িয়ে শিলপাটায় পিষার কর্মযজ্ঞে মেতে ওঠেন।
জনপ্রিয় খাবার ডালের বড়া তৈরির ধুম পড়ে এই গ্রামে। এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন গ্রামীণ নারীরা। এসব বড়া স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পাঠানো হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।
সাতনালা গ্রামের মনিবালা জানান, এ ডালের বড়া তৈরির উপকরণ খুব একটা বেশি নয়। প্রথমে মাষকলাইয়ের মিহি উপকরণ, চালের আটা, কালোজিরা মিশিয়ে ভালোভাবে ফেটে নিতে হয়। এরপর চড়া রোদে পরিষ্কার কাপড় ভিজিয়ে সব উপকরণ মুষ্টিতে চেপে চেপে বিশেষ কায়দায় তার উপর রাখতে হয়। নির্দিষ্ট আকারের বড়াগুলো তখন দেখতেও চমৎকার লাগে। সর্বশেষ রোদে শুকিয়ে তৈরি হয় ডালের বড়া।
একই গ্রামের শিল্পী রাণী জানান, সারা বছর এ বড়া তৈরি হলেও শীতকালই বড়া তৈরির মৌসুম। আশ্বিন থেকে ফাল্গুন পর্যন্ত এই ছয় মাস বড়া বিক্রি হয় ব্যাপকভাবে। প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ কেজি বড়া তৈরি করা যায়। প্রতি কেজি ডালের বড়া তৈরিতে খরচ পড়ে ১২০ টাকা। বিক্রি হয় ২শ টাকা থেকে ২৫০শ টাকা দরে। এতে শীতকালে ঘরে মোটামুটি একটা আয় আসে।
রুপালী মহন্ত জানান, আমরা নিম্নআয়ের কিছু মানুষ ঐতিহ্য পূর্ণ পৈতৃক পেশা বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন নিয়ে কোনরকমে এ শিল্প আজও ধরে রেখেছি। ইচ্ছে থাকলেও এই শিল্পকে প্রসারিত করতে পারছিনা। সরকারী সহযোগিতা পেলে এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব।
চাদঁখানা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাফিজার রহমান জানান, আদি পেশার ওই পরিবারগুলো এতে সম্পৃক্ত থেকে বাড়তি আয় করে সংসারে কিছুটা সচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন। ডালের বড়া দিয়ে মাছ, বেগুন, লাউ, ফুলকপি, আলুর তরকারি রান্না করে তৃপ্তির সাথে খাওয়া যায়।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর