রাঙামাটি। রূপ বৈচিত্র্যের এক অনন্য ভান্ডার। নয়নাভিরাম দৃশ্যপট। আছে পাহাড়, গিরিখাদ, আর আঁকা-বাঁকা নদী। এখানে প্রকৃতি যেন উজাড় করে দিয়েছে নিজেকে। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত, কিংবা বসন্ত; রূপের জৌলুস থাকে এখানে সারা বছরই। পার্থক্য কেবল ঋতুর সাজে। এখানে পরতে পরতে লুকিয়ে আছে অদেখা ভুবন। একটু বৃষ্টি নামলেই নীল আকাশের মেঘের ভেলায় ভাসতে থাকে পাহাড়। সারাদিন চলে নীল, সাদা ও সবুজের লুকোচুরি খেলা। সন্ধ্যার আকাশে গোধূলির রঙ ছড়াতেই ঝাঁক বেঁধে আসে বনের পাখিরা। তাদের খুঁনসুটি দেখে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা। অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর সমৃদ্ধ রাঙামাটি দূর দুরান্ত থেকে আগত পর্যটকদের কাছে একটা রূপকথার গল্পের মতই। তাই তো এখনো রয়েছে সবুজ পাহাড়ে পর্যটকের সমাহার। প্রতিদিনই আসছে হাজারো দেশি-বিদেশি পর্যটক।
রাঙামাটি পর্যটন সূত্রে জানা যায়, ঈদের পর থেকে রাঙামাটিতে যাত্রা শুরু হয়েছে পর্যটকদের। এখনো আসছে হাজার হাজার পর্যটক। জেলার আশপাশের পর্যটক ছাড়াও আসছে বিদেশীরাও। পরিবার-আত্মীয়, স্বজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে সবাই ছুটছে হ্রদ পাহাড়ে। এমনিতেই রাঙামাটিতে রয়েছে পর্যটকদের আনন্দ ও মনোরঞ্জনে নৈসর্গিক পর্যটক কেন্দ্র। পর্যটন কমপ্লেক্সের ঝুলন্ত সেতু, ডিসি বাংলো, পরওয়েল পার্ক, পেদাটিংটিং, সুবলং ঝর্ণা, রাঙামাটি পার্ক, সুখী নীল গঞ্জ, ও আসামবস্তী-কাপ্তাই সড়ক। এছাড়া রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের নীল জলে নৌ ভ্রমণের মতো রোমাঞ্চকর পরিবেশ তো রয়েছেই। এসব দেখে পর্যটকদের আনন্দ উল্লাসের ফোয়ারা বেড়েছে কয়েকগুণ। পাহাড় এখন পর্যটক উৎসবে মেতেছে। উৎসবের আমেজ ছাড়িয়েছে পুরো পাহাড় জুড়ে।
এ ব্যাপারে কথা হয় ঢাকা থেকে রাঙামাটি আসা পর্যটক শিরিন শারমিনের সাথে। তিনি বলেন, প্রচণ্ড তাপদাহের মাঝে হঠাৎ একপশলা বৃষ্টি কার না ভালো লাগে; তাও আবার পাহাড়ে! যান্ত্রিক জীবনে এমন বৈচিত্র্যের কথা চিন্তা করা যায় না। পাহাড় আর অরণ্য নিয়ে অনেক গল্প শুনেছি। কিন্ত বাস্তবতা এর চেয়ে ভিন্ন। পাহাড়ে এত রূপ লুকিয়ে আছে চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না!
অন্যদিকে, দীর্ঘদিনের টানা তাপদাহের পর ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে পাহাড়ে নেমেছে বৃষ্টি। এরই মধ্যে বৃষ্টির আমেজ বইছে এখানে। স্নিগ্ধ বাতাস আর শিশিরের ডগায় বৃষ্টির বিন্দু বিন্দু জল যেন জানান দিচ্ছে বর্ষার আগাম বার্তা। পাহাড়ে ঘোরার এটা উত্তম সময় বলে মনে করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া বলেন, রাঙামাটিতে পর্যটন মৌসুমের আমেজ বইছে। শান্ত পরিবেশ। প্রকৃতিও সেজেছে আপন রূপে। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য পাহাড়ে ঘোরার এটাই উত্তম সময়। অবকাশ কাটানোর জন্য দূর-দূরান্ত থেকে আসছে পর্যটকরা। তাই রাজস্ব আয়ও বেড়েছে কয়েকগুণ। পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য আছে পর্যপ্ত ট্যুরিস্ট পুলিশ।
এছাড়া দেশের যে কোনো স্থান থেকে রাঙামাটিতে আসার জন্য সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু রয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা থেকে রাঙামাটি যেতে সরাসরি চালু রয়েছে বিলাসবহুল বাস সার্ভিস। রয়েছে এসি বাসের সুবিধা। ঢাকার সায়েদাবাদ, কমলাপুর, ফকিরাপুল, মতিঝিল, কলাবাগান প্রতিদিন এমনকি রাতেও ছাড়ে বাসগুলো। চট্টগ্রাম থেকে যাওয়া যায় খুব সহজে। চট্টগ্রাম থেকে প্রায় ৭৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পর্যটন শহর রাঙামাটি। চট্টগ্রাম শহর থেকে রাঙামাটি আসতে সময় লাগবে মাত্র দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। চট্টগ্রামের অক্সিজেন বাস স্টেশন। সেখান থেকে ছাড়ে পাহাড়িকা, সৌদিয়া, এস আলম। ভাড়াও কম।