ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনাসহ নানা অভিযোগে নড়াইলের কালিয়ায় বড়দিয়া বাজারে হাজী খান রওশন আলী হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামের অনুমোদনহীন হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সোমবার (৯ মে) এই নির্দেশ দিয়েছেন কালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) ও গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ডা. কাজল মল্লিক। তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এর আগে শুক্রবার (৬ মে) দুপুরে ভুয়া ডাক্তার দিয়ে অপারেশন করানোয় অনুমোদনহীন ওই বেসরকারি হাসপাতালে এক প্রসূতির গর্ভের সন্তানসহ মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ ওঠে। শিউলি বেগম নামের সেই প্রসূতি উপজেলার নড়াগাতি থানার পেচিডুমুরিয়া গ্রামের চৌকিদার আকবর হোসেন মোল্যার মেয়ে।
সেই ঘটনা আলোচনায় আসার পর নড়াইলের সিভিল সার্জন ডা. নাছিমা আকতার কালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কাজল মল্লিককে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। গঠিত কমিটিকে চার কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেন।
এরই প্রেক্ষিতে রবিবার (৮ মে) সারাদিন তদন্ত কমিটির প্রধান টিএইচও ডা. কাজল মল্লিকের নেতৃত্বে ডা.আব্দুল গনি (জনি) ও ডা.সুজয় রায়সহ তিন সদস্যের একটি দল হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। তদন্ত দলটি পরিদর্শনে গিয়ে দেখতে পান কোনো রকম অনুমোদন ছাড়াই হাসপাতালটির কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। পরিদর্শন শেষে এবং ক্ষতিগ্রস্ত জিন্নাত আলীর (নিহতের স্বামী) বাড়িতে গিয়ে তার জবানবন্দি গ্রহণসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জনস্বার্থে হাসপাতালটির কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে সূত্র জানায়।
তদন্ত কমিটির প্রধান ডা. কাজল মল্লিক বলেন, ‘ওই হাসপাতালে নিয়মিত কোনো চিকিৎসক বা সেবিকা থাকার প্রমাণ মেলেনি। একটি ক্লিনিক বা বেসরকারি হাসপাতাল পরিচালনার জন্য যে সকল শর্তাবলি বা যোগ্যতা থাকার প্রয়োজন সেখানে তার কোনোটিই পাওয়া যায়নি। ক্লিনিক বা হাসপাতালটির মালিক পক্ষের লোকজন পলাতক থাকায় অভিযুক্ত চিকিৎসকের পরিচয় জানা যায়নি। সেখানে রক্ষিত চিকিৎসকদের বিলবোর্ডে যাদের নাম রয়েছে তারা কোনো ধরনের চিকিৎসক তা জানা যায়নি। অধিক মুনাফার লোভে হাতুড়ে ডাক্তার দিয়ে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে সিজারিয়ানের মতো গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন মোটেই আইনসিদ্ধ নয়। তাই স্বাস্থ্যসেবার অনুপযোগী ওই অনুমোদনহীন হাসপাতালটির সকল কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিষয়টি কালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্থানীয় থানার ওসিকেও চিঠির মাধ্যমে অবহিত করা হয়েছে।’ কথিত চিকিৎসকের ভুলে একজন প্রসূতি মায়ের ও তার গর্ভের অনাগত সন্তানের মৃত্যুতে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।
প্রসঙ্গত, সিজারিয়ানের জন্য পূর্ব নির্ধারিত দিনে ১৫ হাজার টাকার চুক্তিতে শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে ওই হাসপাতালে ভর্তি হন শিউলী বেগম। গোপালগঞ্জ থেকে আসা কথিত সার্জন শরিফুল ইসলাম শিউলী বেগমের সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার করার জন্য অপারেশন থিয়েটারে (ওটি) নিয়ে যায়। অস্ত্রোপচারের পূর্বে চিকিৎসক প্রসূতিকে অচেতন করার জন্য একটি ইনজেকশন পুশ করার সঙ্গে সঙ্গে অপারেশন থিয়েটারেই রোগীর মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আইনি ঝামেলা এড়াতে সাড়ে তিন লাখ টাকায় নিহতের পরিবারের সঙ্গে সমঝোতা করার পর ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা