২৮ মে, ২০২২ ১৪:২৪

নিয়োগ বাণিজ্যের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দু'গ্রুপের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

নিয়োগ বাণিজ্যের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দু'গ্রুপের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া

বগুড়ার শেরপুরে খামারকান্দি বালিকা দাখিল মাদ্রাসায় নিয়োগ বাণিজ্যের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সশস্ত্র মহড়ার মুখে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। পরে পুলিশের কঠোর তৎপরতায় পরিস্থিতি শান্ত হয়। 

একপর্যায়ে অভিযান চালিয়ে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একটি কক্ষ থেকে তিনটি দেশীয় অস্ত্র ধারালো হাসুয়া উদ্ধার করা হয়। তবে কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি উপজেলার খামারকান্দি গ্রামে অবস্থিত খামারকান্দি বালিকা দাখিল মাদ্রাসায় নিরাপত্তাকর্মী পদে লোক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী সাতজন চাকরি প্রার্থী আবেদন করেন। এরমধ্যে মাদ্রাসাটির সভাপতির দায়িত্বে থাকা আব্দুল হান্নানের ভাই মজনুর রহমান মজনুও রয়েছেন। শুক্রবার ছিল ওই পদের নিয়োগ পরীক্ষা। এজন্য সব প্রস্তুতিও নেওয়া হয়। এমনকি নিয়োগ বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে উপস্থিত হন। বেলা তিনটার দিকে পরীক্ষার কার্যক্রমও শুরু করছিলেন তারা। কিন্তু খামারকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আয়নাল হকের নেতৃত্বে একদল সশস্ত্র যুবক ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসে হট্টগোল শুরু করেন। এসময় আরেক পক্ষ মাদ্রাসার সভাপতি আব্দুল হান্নানের সশস্ত্র লোকজন তাদের কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানায়। মূলত এরপরই দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এই উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন সংশ্লিষ্টরা।

খামারকান্দি বালিকা দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি আব্দুল হান্নান বলেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আয়নাল হক তার কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে বসেন। এতে রাজী না হওয়ায় তার সশস্ত্র লোকজন মাদ্রাসায় এসে নিয়োগ পরীক্ষায় বাধা সৃষ্টির করে। সেইসঙ্গে আমার লোকজনের ওপর মারমুখি হয়। পাশাপাশি ধাওয়া দিয়ে তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়। এমনকি নিয়োগ পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ফেলা হয়। এছাড়া তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করতে বাধ্য করে।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে খামারকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আয়নাল হক বলেন, মাদ্রাসার সভাপতি হান্নান তার ভাই মজনুর নিকট থেকে দশ লাখ টাকা নিয়ে তাকে চাকরি দেওয়ার জন্য সব আয়োজন সম্পন্ন করেছিল। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর স্থানীয় লোকজন বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন এবং তাদের প্রতিবাদের মুখে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।

এসব ঘটনার সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই-দাবি করে এই আওয়ামী লীগ নেতা অভিযোগ করে বলেন, মাদ্রাসার সভাপতি নানা অনিয়ম-দুর্নীতে জড়িয়ে পড়েছেন। ইতিপূর্বেও দুইটি পদে নিয়োগ দিয়ে প্রায় ত্রিশ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এমনকি আমাকে ম্যানেজ করার জন্য নব্বই হাজার টাকা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি অন্যায়ের সঙ্গে কোনো আপোষ করিনি। তাই নিয়োগের টাকা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না বলে দাবি করেন তিনি।

অত্র মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আবুল হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। পরবর্তীতে পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হবে।

শেরপুর থানার উপ-পরিদর্শক মোস্তাফিজ বলেন, মাদ্রাসায় নিয়োগ পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হলেও পুলিশি কঠোর তৎপরতায় পরিস্থিতি শান্ত হয়। এছাড়া গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তিনটি দেশীয় অস্ত্র ধারালো হাসুয়া উদ্ধার করা হয়। কিন্তু কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। তবে আইন শৃঙ্খলা বিনষ্টকারীদের সনাক্ত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। 

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর