শেরপুরের নকলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এক অভিভাবকের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। গত ২ জুন বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার গণপদ্দী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রথমে বিদ্যালয় মাঠে ও পরে এক অভিভাবকের বাড়িতে এ হামলা হয়। এদিকে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হামলা ও মারপিটের ঘটনায় এলাকা ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২ জুন নকলা উপজেলার গণপদ্দী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে চতুর্থ শ্রেণিতে স্থানীয় মো. নাজমুল সরকারের ছেলে তাহসিন আহমেদ লিসান (১১) ও জাকারিয়া সাফি সোহাগের ছেলে আব্দুর রহমান রামিম (১১) সমানসংখ্যক (৮৭) ভোট পায়। একইভাবে পঞ্চম শ্রেণিতেও দুই প্রতিযোগী শিক্ষার্থী সমানসংখ্যক (১০০) ভোট পায়। পরে বিষয়টির সমাধানে শিক্ষার্থী অভিভাবক নাজমুল সরকার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মমতাজ জাহানকে লটারির প্রস্তাব দিলে ক্ষিপ্ত হন আরেক অভিভাবক মো. আব্দুল গণি (৩২)। বাদানুবাদ ও উচ্চস্বরে গালাগালির এক পর্যায়ে নাজমুলকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন গণি। এ সময় শিশু শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করে লুকাতে গিয়ে চেয়ারের সাথে ধাক্কা খেয়ে আহত হয় দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রিয়া (৮)। পরে শিক্ষকদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়।
রিয়ার আহত হওয়ার খবর শুনে চাচা রাকিব সরকার (৩৫) গিয়ে প্রতিবাদ করে। এ সময় উত্তেজিত গণি শিক্ষকদের সামনে আবারও মারমুখী হয়। এক পর্যায়ে বিষয়টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্থানীয় চেয়ারম্যান ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবহিত করেন। গণির মারমুখী আচরণের জন্য এখন পর্যন্ত বিদ্যালয়ের ওই ফলাফল প্রকাশ করতে পারেনি বলে প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একইদিন বিকেল সাড়ে চারটার দিকে আব্দুল গণি, তার দুই ভাই জামালপুর ট্রাফিক পুলিশে কর্মরত মো. মালেকুজ্জামান রনি (২৮) ও ময়মনসিংহ জেলা কারাগারের কারারক্ষী মো. মনিরুজ্জামান মনির (৩৬) এবং তার বাবা পাঞ্জাব আলী (৫৮) ধারাল আস্ত্র নিয়ে নাজমুল সরকারের বাড়িতে হামলা চালায়। এসময় বাড়ির টিনের গেট বন্ধ থাকায় টিন দা দিয়ে কুপিয়ে ভাঙচুর করে তারা বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে এবং নাজমুলের ছোটভাই রাকিব সরকারে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। রাকিব বর্তমানে গুরুতর অবস্থায় শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
গণপদ্দী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মমতাজ জাহান বলেন, ২৪ বছর চাকরিজীবনে এমন পরিস্থিতিতে পড়িনি। বিষয়টির ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
তবে অভিযুক্ত গণি জানান, ঘটনার সাথে আমার ভাইদের কোন সম্পৃক্ততা নেই। বাড়িঘরে আক্রমণের কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমরা নির্দোষ। বিষয়টি দ্রুত মিমাংসা করে দিবেন বলে নেতারা আশ্বস্ত করেছেন।
ময়মনসিংহ জেলা কারাগারের জেলার আব্দুল্লাহ ইবনে তোফাজ্জল হোসেন খান বলেন, ওইদিন কারারক্ষী মনিরুজ্জামান কর্মস্থলে ছিলেন। বাকি কিছু জানা নেই।
এ ব্যাপারে নকলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মুশফিকুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় দুপক্ষের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনার বিষয়ে তদন্ত চলছে। নাজমুল সরকারদের দায়ের করা মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অভিযুক্তরা যেহেতু সরকারি কর্মচারী, এই বিষয়ে পুলিশ সুপারের মতামত চাওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মো. হাসান নাহিদ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, অপরাধী সরকারি-বেসরকারি যেই হোক, ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল