দিনাজপুর অঞ্চলে বর্ষায় পানি বাড়ার সাথে বিক্রি বেড়েছে মাছ ধরার উপকরণ। দেশীয় বাঁশ-বেত দিয়ে মাছ ধরার ফাঁদ তৈরির কারিগর এবং বাড়ির নারীরা অবসরে এসব উপকরণ তৈরি করে বাড়তি অর্থ আয় করছে। অপরদিকে, পেশাদার ও মৌসুমী জেলেরা এসব দিয়ে মাছ ধরে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করছে। এসব উপকরণ এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন নাম যেমন-ভোরং, পলাই, ঢাংগি, ডাড়কি টইয়া, ডিড়ই, বানা, হেঙ্গা ও খোলসুন ইত্যাদি।
জানা যায়, গত কিছু দিনের বৃষ্টিতে অনেক স্থানে নদী, নালা ও পুকুর-ডোবায় কিংবা জমি বর্ষার পানিতে ভরে গেছে। এ সুযোগে এসব ফাঁদ রেখে মাছ ধরার উৎসবে মেতে উঠেছে অনেকে। বর্ষা মৌসুমে বেশি ব্যবহার হয় বাঁশের তৈরি ভোরং নামের একটি যন্ত্র। এলাকা ভেদে এই যন্ত্রটিকে খোলসুন বলা হয়। আর বই-পুস্তকের ভাষায় বিটে বলা হয়। পানির মধ্যে এই যন্ত্রটি রেখে দেওয়া হয়। চলাচলে ছোট ছোট মাছগুলো বাঁশের তৈরি এই ফাঁদের ভেতরে আটকা পড়ে। এটি গ্রামাঞ্চলে মাছ ধরার জনপ্রিয় মাধ্যম।
মঙ্গলবার দুপুরে খানসামা উপজেলার পাকেরহাটে দেখা যায়, মাছ ধরার কয়েক প্রকার এসব উপকরণ নিয়ে আছে কারিগররা। পেশাদার ও সৌখিন মাছ শিকারিদের আনাগোনায় জমে উঠেছে বাজারটি। একেকটি উপকরণের দাম প্রকারভেদে ৩০০ থেকে প্রায় ৩ হাজার টাকা।
বাজারে উপকরণ কিনতে আসা ছাতিয়ানগড় গ্রামের মশিউর রহমানসহ কয়েকজন জানান, গ্রামের আশপাশের আবাদি জমি ও ছোট ছোট ডোবা নালা বর্ষার পানিতে ভরে গেছে। আর সেখানে দেখা মিলছে বিভিন্ন জাতের দেশি মাছ। বর্ষাকাল শুরু হলেই মাছ ধরি, এটা আমার নেশা। তাই মাছ ধরার জন্য ভোরং কিনতে এসেছি।
দশ বছর থেকে এ উপকরণ তৈরি ও বিক্রি করেন খানসামার ভান্ডারদহ গ্রামের সুখচাঁদ। তিনি বলেন, আগের মতো তো আর বাঁশের উপকরণ বিক্রি নাই। এখন মানুষ আধুনিক হয়ে গেছে, তারা প্লাস্টিকের জিনিসপত্র ব্যবহার করেন। কুলা, ঝাড়ু, খইচালা আর কেউ বেশি নেয় না। তবে বর্ষাকাল এলে বেশি মাছ ধরার উপকরণ বিক্রি হয়। একেকটি উপকরণ বিক্রি করে আকার ভেদে একশ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ হয়। তবে আগের চেয়ে এসবে লাভ কমে গেছে। শুধু বাপ-দাদার জন্য অনেকেই এখন এসব উপকরণ তৈরি ও বিক্রি করে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই