রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের বড় হিজলি গ্রামের একটি পাট ক্ষেত থেকে কিশোর আজিম মোল্ল্যা ওরফে বাদলের (১৫) মরদেহ উদ্ধার করা হয়। গত রবিবার স্থানীয়দের সংবাদের ভিত্তিতে সেই মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সেই হত্যার রহস্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উদঘাটন করেছে বালিয়াকান্দি থানা পুলিশ।
আজিম বালিয়াকান্দি উপজেলার নববাপুর ইউনিয়নের বড় হিজলী গ্রামের হুমায়ন মোল্ল্যার ছেলে। স্থানীয় একটি মাদ্রাসার অনিয়মিত ছাত্র ছিল সে। বেশ কিছুদিন পড়ালেখা শেষ করে রাজমিস্ত্রীর কাজ করতো। এরপর সেটি ছেড়ে দেয়। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, আজিম মাদ্রাসার ছাত্র ছিল। শান্ত প্রকৃতির ছিল সে।
বৃহস্পতিবার আজিম হত্যার তথ্য জানতে রাজবাড়ী পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গেলে রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার এম এম শাকিলুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে এমন তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, আজিম হত্যার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই ক্লুলেস হত্যার রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে রাজবাড়ীর আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে গ্রেফতার দুই কিশোর। জবানবন্দিতে উঠে এসেছে আজিম হত্যাকাণ্ডের রহস্য।
পুলিশ ও ১৬৪ ধারার জবানবন্দি থেকে জানা যায়, আজিম ২৫ জুন রাতে সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। আসামিরা একসাথে মাদক সেবনসহ এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতো। মাদক সেবনে ভাগাভাগি ও এক আসামির চাচাতো বোনের সাথে প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে বিরোধ চলছিল গ্রুপটির মধ্যে। ২৫ তারিখে আসামিরাসহ আজিম পাঠ ক্ষেতে যায় আঠা জাতীয় মাদক সেবন করতে। সেখানে একপর্যায় মাদক সেবনের ভাগাভাগি ও নিজেদের পরিবারের মেয়েদের বিরক্ত করা নিয়ে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। কথা কাটাকাটি থেকে এক সময় উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। তখন তাদের গ্রুপ থেকে আজিমকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য সজীব ছুরি দিয়ে প্রথম আজিমকে আঘাত করে। হত্যার সময় অন্যান্য আসামিরা ঘটনাস্থলে থেকে আজিমকে হত্যায় সহযোগিতা করে বলে জানা যায়। নারীর প্রতি আসক্ত থাকার কারণে আজিমের একটি বিশেষ অঙ্গ কেটে ফেলে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া আসামিরা। হত্যার সাথে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে আটজন অংশগ্রহণ করতে পারে বলে জানায় পুলিশ। অন্য কোনোভাবে এই হত্যার সাথে কেউ জড়িত আছে কিনা সেই বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কাজ করছে বলে জানায় জেলা পুলিশের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা।
বালিয়াকান্দি থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২৫ জুন রাত ১০টা থেকে ১১টার মধ্যকার কোনো এক সময় আজিমকে হত্যা করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে আসামিরা। পরদিন রবিবার অজ্ঞাতনামা বেশ কয়েকজন আসামিদের নামে হত্যা মামলা দায়ের করে নিহতের বড়ভাই কামরুল মোল্ল্যা। হত্যার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আজিম হত্যার রহস্য উদঘাটন করে বালিয়াকান্দি থানা পুলিশ। এ ঘটনায় তিনজন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বালিয়াকান্দি থানার উপ-পরিদর্শক মো. রাজিবুল ইসলাম বলেন, হত্যার রহস্য উদঘাটনের ব্যাপারে আমাকে পরামর্শ প্রদান করেন আমাদের পুলিশ সুপার স্যার। দ্রুত আজিম হত্যার সাথে জড়িত অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতার করে আদালতে পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই