কুড়িগ্রামে নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে দুধকুমর, তিস্তা, ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদসহ সবকটি নদ-নদীতে এখন চলছে তীব্র নদী ভাঙন। ফলে এসব নদনদীর অববাহিকার মানুষজন নদী ভাঙনে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।
ভাঙন প্রতিরোধে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড সাময়িক ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় প্রতিবছর শতশত বাড়িঘর ও পরিবার তাদের ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন। হারাচ্ছেন তাদের বসতভিটার পাশাপাশি আবাদি জমি,বিভিন্ন স্থাপনা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিলম্বের কারণে স্থায়ীভাবে ভাঙন প্রতিরোধে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।
জানা গেছে, গত এপ্রিল মাস থেকে শুধুমাত্র তিস্তার ১৩টি স্পটে অব্যাহত ভাঙনে গৃহহীন হয়েছে প্রায় আড়াই শতাধিক পরিবার। চরমে উঠেছে গৃহহীন পরিবারগুলোর দুর্ভোগ। ঝুঁকিতে রয়েছে ৮টি স্কুল, বাঁধ, সড়ক, ক্লিনিকসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।এখন শুধু তিস্তায় নয়, ভাঙছে দুধকুমর নদের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার তিলাই ইউনিয়নের কালিগঞ্জের সিএন্ডবি ঘাটে, ধরলা নদীর সদর উপজেলার ঘোগাদহ ও যাত্রাপুর ইউনিয়নের কয়েকটি পয়েন্টে,ব্রহ্মপুত্র নদের উলিপুর উপজেলার দলদলিয়া,থেতরাই, বুড়াবুড়ি,বজরাসহ আরো কয়েকটি ইউনিয়নের বেশকিছু পরিবারের বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে। এছাড়াও রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙা ইউনিয়নের ঘড়িয়ালডাঙা ও তৈয়বখাঁ এবং বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের কয়েকটি পয়েন্টে সেইসাথে উলিপুর ও গাইবান্ধা এলাকার মোল্লাহাট নদী ভাঙন প্রকট আকার ধারণ করেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়,এখন জেলার কয়েকটি বড় নদীতে প্রায় ২৯টি স্পটে নদী ভাঙন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। কোথাও কোথাও ২কিলোমিটার জুড়ে ভাঙলে কাজ করা হচ্ছে মাত্র গুরুত্ব বেইজে। তবে মহাপরিকল্পনা ছাড়াও ভাঙন রোধে একটি নতুন প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। যেখানেই নদী ভাঙন সেখানেই দুই কিলোমিটার জুড়ে ভাঙন থাকলে সেখানে অল্প করে পাউবো ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানা যায়।
রাজারহাটের ঘড়িয়ালডাঙার বাসিন্দা আব্দুল মজিদ মিয়া জানান, আমাদের এলাকায় প্রতিবছর তিস্তা নদী যেভাবে ভাঙে তাতে বসতভিটা ও জায়গা জমি রক্ষা করা কঠিন হয়ে যাচেছ। আমরা চাই স্থায়ী ভাঙন প্রতিরোধ। অন্যদিকে,যাত্রাপুর ইউনিয়নের চরের বাসিন্দা মফিজল হোসেন জানান, বন্যার পর পরই পানি কমতে শুরু হয়েছে নদী ভাঙন।এক মাসে বাড়ি ঘর দুয়ার নদীত চলি গেছে।এভাবে জেলা জুড়ে এখন চলছে তীব্র নদী ভাঙন।কিন্তু ভাঙন প্রতিরোধে প্রয়োজন স্থায়ী ব্যবস্থা।তিস্তা নদীতে কখনও পানি বাড়ে,কখনও কমে। কিন্তু ভাঙনের তান্ডব থামছেনা। বাম তীরের ৪০ কিলোমিটার অংশে কোন স্থায়ী তীর প্রতিরক্ষার কাজ চলমান না থাকায় ভাঙনের ভয়াবহতা দেখছে তিস্তা পারের মানুষ।স্থানীয়দের অনেকেই জানান, রাজারহাটের গতিয়াশাম থেকে চর বজরা এলাকায় ৮টি স্কুল, কয়েকশ পরিবার, বিপুল পরিমান আবাদী জমি রয়েছে তীব্র ভাঙনের মুখে রয়েছে। অনেক আবেদন নিবেদন করা হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন রোধে কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছেনা বলে অভিযোগ তাদের।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্ল্যাহ আল মামুন বিভিন্ন পয়েন্টে তীব্র নদী ভাঙনের কথা স্বীকার করে জানান, জরুরি কাজের আওতায় বিভিন্ন এলাকায় জিওব্যাগ ফেলে তিস্তার ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়া কুড়িগ্রাম জেলার জন্য প্রস্তাবিত নতুন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শুরু হলে তিস্তার ভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে। এছাড়াও অন্য সকল নদনদীতে ভাঙন প্রতিরোধে বালুর বস্তা ফেলে অস্থায়ীভাবে কাজ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
বিডি প্রতিদিন/এএম