পানি বাড়ায় যমুনার অরক্ষিত অঞ্চলে ফের ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এক রাতে ভাঙনে প্রায় ৪০টি বসতভিটা একেবারে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সবকিছু হারিয়ে খোলা আকাশের নীচে বসবাস করছে ভাঙ্গনে শিকার পরিবারগুলো। তাদের অভিযোগ, কস্টে থাকলেও জনপ্রতিনিধিরা তাদের খোঁজ খবর নিচ্ছে না এবং কেউ পাশে দাঁড়ায়নি।
জানা যায়, সিরাজগঞ্জ জেলায় প্রায় ৮১ কিলোমিটার যমুনা নদীর তীর রয়েছে। এর মধ্যে ৫৫ কিলোমিটার সিসি বøক দিয়ে স্থায়ী বাঁধ দেয়া হয়েছে। ২৬ কিলোমিটার অরক্ষিত এলাকার মধ্যে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুর ও কৈজুরী ইউনিয়নে প্রায় ৬ কিলোমিটার এলাকায় বিগত কয়েক বছর যাবত ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৮-১০টি গ্রামের হাজার হাজার বসতভিটা, ফসলী জমি, মসজিদ মাদ্রাসা ও তাঁত কারখানা বিলীন হয়ে গেছে। বাস্তুহারা ও নিঃস্ব হয়ে পড়ছে ভাঙ্গন কবলিত হাজার হাজার মানুষ। চলতি বছরে মাত্র একমাসের ব্যবধানে দুটি ইউনিয়নের তিনটি পয়েন্টে ভাঙ্গনে অন্তত শতাধিক বসতভিটা একেবারে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়াও গত দুদিন আগে আকস্মিক ভাঙ্গনে জালালপুরে প্রায় ৪০টি বসতবাড়ী সম্পুর্ন বিলীন হয়ে গেছে। সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে এসব পরিবার। ভাঙ্গন অব্যাহত থাকায় আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে এসব মানুষের। তাদের অভিযোগ দুর্ভোগে থাকলেও কোন জনপ্রতিনিধি তাদের পাশে দাঁড়ায়নি।
ভাঙ্গন কবলিত জালালপুর এলাকার বাসিন্দা শাহআলম ও ছোলেমান জানান, দুদিন আগে আকস্মিক ভাঙ্গনে প্রায় ৪০টি বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ঘর থেকে কোন কিছুই বের করা সম্ভব হয়নি। সবকিছু হারিয়ে খোলা আকাশের নীচে মানবেতর জীবনযাপন করলেও কোন জনপ্রতিনিধি একবার খোঁজ নিতেও আসেনি।
ভাঙ্গন কবলিত আবুল কালাম ও ঠান্ডু মিয়া জানান, ৮০ ডেসিমাল ফসলী জমি মুহুর্তের মধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। নদীরধারে এখন বসতভিটাটুকু রয়েছে। এটুকু ভেঙ্গে গেলে একেবারে রাস্তার ফকির হয়ে যাবো। এখন নির্ঘুম রাত কাটছে আমাদের।
একই এলাকার গফুর সেখ ও শহিদুল ইসলাম জানান, ভাঙ্গনরোধে যদি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করা না হয় তবে কয়েকটি গ্রামের শতশত বসতভিটা বিলীন হয়ে যাবে। এলাকার মানুষজন একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়বে। এ অবস্থায় জরুরীভিত্তিতে ব্যবস্থাগ্রহনের দাবী জানিয়েছেন ভাঙ্গনকবলিতরা।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম জানান, ওই এলাকার ৬ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙ্গন রোধে প্রকল্প ইতোমধ্যে পাশ হয়েছে। জরুরী ভিত্তিতে জিওব্যাগ ফেলানো হয়েছিল। কিন্তু তিনটি পয়েন্টে প্রায় এককিলোমিটার এলাকা জিওব্যাগসহ বিলীন হয়ে গেছে। তারপরেও যেখানে ভাঙ্গনের তীব্রতা রয়েছে সেখানে নতুন করে জিওব্যাগ ফেলানোর প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এছাড়াও পানি কমে গেলে জালালপুর এলাকায় নদী ড্রেজিং করে গতিপথ পরিবর্তন, একটি ক্রসবার এবং সিসি ব্লক দিয়ে স্থায়ী বাধ নির্মাণ করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/এএম