ফেনীর সোনাগাজীর নবাবপুর ইউনিয়নে ২০০৩ সালে মাকে বেঁধে মেয়েকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি লাতু মিয়াকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৩)। আসামি লাতু মিয়া গত ১৯ বছর ধরে আত্মগোপনে ছিলেন।
মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানী কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ। এর আগে, সোমবার (১৭ অক্টোবর) গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর বাড্ডা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব সূত্র জানায়, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য নানা অপকর্ম করতেন লাতু মিয়া। ভুক্তভোগীর বাবা মারা যাওয়ায় তার মাকে এবং তাকে বিভিন্ন সময় কুপ্রস্তাব দিত। তার কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় লাতু দলবল নিয়ে ২০০৩ সালের ১৩ মে ভুক্তভোগীর বাড়িতে গিয়ে হামলা করে। ঘরের দরজা ভেঙে বিধবা মাকে অস্ত্রের মুখে বেঁধে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে তারা। পরে ঘটনাটি সারাদেশে আলোচিত হলে লাতু আত্মগোপনে চলে যায়।
২০০৩ সালে ১৩ মে গভীর রাতে সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের একটি বাড়িতে ঘরের দরজা ভেঙে প্রবেশ করে লাতু মিয়া, ফারুক, জাহাঙ্গীর আলম ও কাশেম। পরে তারা বিধবা মাকে অস্ত্রের মুখে বেঁধে তার সামনে ১৩ বছরের মেয়েকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর মা ১৩মে সোনাগাজী থানায় একটি ধর্ষণ মামলা করেন।
লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন বলেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত শেষে ২০০৩ সালের ১৩ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরে মামলার বিচার কাজ শেষে চলতি বছরের ১৪ জুলাই জাহাঙ্গীর আলম, আবুল কাশেম ও মো. লাতু মিয়াসহ অভিযুক্ত তিন আসামির বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে প্রত্যেক আসামিকে দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেন এবং মো. ফারুকের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস দেন আদালত।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামী লাতু র্যাবকে জানায়, ঘটনার সময় সোনাগাজী এলাকায় মো. ফারুকের নেতৃত্বে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারসহ নানা অপকর্ম করতো। এছাড়া বিভিন্ন সময় নারীদের উত্যক্ত করতো তারা। ঘটনার পর পর লাতু ও তার সহযোগীরা একাধিকবার গ্রেফতার হয়েছিল। পরে জামিনে বের হয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। জামিনে বের হওয়ার পর মামলা তুলে নেওয়ার জন্য তারা ভুক্তভোগী ও ভুক্তভোগীর মাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে।
র্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, ২০০৩ সালে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার পর তার পলাতক জীবন শুরু হয়। এ ঘটনার পর তিনি চট্টগ্রামে গিয়ে রিকশাচালক হিসেবে জীবিকা নির্বাহ শুরু করে। কিন্তু কোনো কায়িক পরিশ্রম তার ভালো লাগত না। তারপর চুরি ডাকাতিতে জড়িয়ে পড়েন। একটি ডাকাতির ঘটনায় লাতু মিয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হতে গ্রেফতার হয়ে জেল খাটেন। জামিনে বের হয়ে গোপনে তার বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের বাসায় অতিথি হিসেবে জীবনযাপন করত।
তিনি আরও জানান, লাতু মিয়া মাঝে মাঝে তার নিজ বাড়িতে এসে গোপনে তার স্ত্রী সন্তানের সঙ্গে দেখা করত এবং তাদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে যেত। তারপর তিনি কিছুদিন সিলেটে মাজার এলাকায় ঘুরে বেড়ান। একপর্যায়ে ঢাকায় এসে হকার হিসেবে ফুটপাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বিক্রি করতেন। পেশায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে পড়ার আশঙ্কা থেকে তিনি দারোয়ানের চাকরি নেয়। পলাতক সময়ে তিনি নিজেকে অলি নবী হিসেবে পরিচয় দিতেন। মামলার রায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ আদেশ হওয়ার পর ঢাকায় একটি মাজারে আত্মগোপন করে।
সোনাগাজী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. খালেদ হোসেন ফাঁসির আসামী লাতু মিয়াকে র্যাব-৩ এর কাছ থেকে হস্তান্তর করার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ