মুক্তিযোদ্ধা মোল্লা কোবাদ। বয়স ৭২ বছর। ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী শত্রুর বিরুদ্ধে শক্ত হাতে যুদ্ধ করে শত্রু ঘায়েল করেছেন। তার মতো লাখো মুক্তিযোদ্ধার অসামন্য অবদানে আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ। সেই কোবাদ মোল্লা আজ অসুস্থ হয়ে নিজের ভারসাম্য হারিয়েছেন। বাধ্য হয়ে শিকলবন্দি জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাকে। অর্থ ও বুঝমান লোকের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেনন না।
স্কুল পড়ুয়া একমাত্র সন্তানকে বাধ্য হয়ে লেখাপড়ার পাশাপাশি ইজিবাইক চালিয়ে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। পারিবারিক অস্বচ্ছলতা ও অজ্ঞতার কারণে এই বীর মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসা করাতে পারছেন না পরিবার। নিরুপায় এই মুক্তিযোদ্ধাকে শিকল পরিয়ে বেঁধে রাখা হচ্ছে। এই বীর মুক্তিযোদ্ধা মোল্লা কোবাদের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের খালিয়া গ্রামে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থান ও নিজ জেলায় একাধিক সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন তিনি। সৎ, সদালাপি ও স্পষ্টবাদী হওয়ায় এলাকায় তার ব্যাপক সুনাম রয়েছে। দীর্ঘ ৬ বছর যাবত অসুস্থ থাকায় এখন শারীরিক ভারসাম্যতা, বাকশক্তিও হারিয়েছেন তিনি। ব্রেন স্ট্রোক হওয়ায় বেঁধে না রাখলে এখানে সেখানে চলে যান। তাই পরিবারের সদস্যরা ৬ মাস ধরে তাকে বেঁধে রেখেছেন।
তিন কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জনক এই মুক্তিযোদ্ধা। তিন কন্যাকে বিয়ে দিয়েছেন। একমাত্র পুত্র আদনান মোল্লা এলাকার খালিয়া ইউনাইটেড একামেডির দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সম্প্রতি ওই মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী হেলেনা বেগম স্বামীর মুক্তিযোদ্ধার ভাতার বিপরীতে ১০ লক্ষ টাকা ব্যাংক লোন করেছেন। সেখান থেকে কিছু টাকা খরচ করে স্বামীর চিকিৎসা করানোর চেষ্টা করেছেন। আর সংসারের খরচ চালানোর জন্য একমাত্র সন্তান ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা দিয়ে একটি ইজি বাইক কিনে দিয়েছেন।
মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী হেলেনা বেগম বলেন, ৬ বছর আগে তার স্বামী ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। তখন তাকে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল ও খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করিয়েছি। কিন্তু কোনো উন্নতি হয়নি। গত ৬ মাস হলো তার অবস্থার আরো অবনতি হয়েছে। এখানে সেখানে চলে যায়, পরে খোঁজাখুজি করে আনতে হয়। তাই তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়।
ছেলে আদনান মোল্লা বলেন, আমার মা লোন করে ইজিবাইক কিনে দিয়েছেন। স্কুলে পড়াশোনার পাশাপাশি আমি ওই ইজিবাইক চালিয়ে সংসার ও অসুস্থ বাবার চিকিৎসায় খরচ করি। তাই সরকারের কাছে আমার আবেদন বাবাকে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করে দিবেন।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মোহসিন উদ্দিন বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের শ্রেষ্ঠ সন্তান। সব সময় আমরা তাদের পাশে আছি এবং আগামীতেও থাকবো।
মুক্তিযোদ্ধারা এ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধা বিপর্যয়ের সময় সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসবে এমনটাই আশা তাঁর পরিবারসহ স্থানীয়দের।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল