বরিশালের মুলাদী উপজেলার সাহেবের চর সংলগ্ন আড়িয়ালখাঁ নদীর তীর থেকে গত ১২ অক্টোবর উদ্ধার হওয়া হাত-পা বাঁধা অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় উদঘাটিত হয়েছে। ওই ঘটনায় গ্রেফতার আসামি খোরশেদ আলম হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে বরিশাল আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
শনিবার আদালতে জবানবন্দিতে খোরশেদ আলম জানান, পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধের জের ধরে নারায়ণগঞ্জের সিঙ্গাপুর ফেরত নুরুল আমিনকে মুলাদী ডেকে নেন তার সিঙ্গাপুর প্রবাসী জামাতা (কামরুল ইসলাম)। পরে তাকে হত্যা করেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
হত্যাকাণ্ডের তিন দিন পর কামরুল ফের সিঙ্গাপুর চলে যায় বলে জবানবন্দিতে স্বীকার করেন তার শ্বশুর মুলাদীর সফিপুর ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামের বাসিন্দা খোরশেদ আলম। জবানবন্দি গ্রহণের পর আদালতের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
নিহত নুরুল আমিন নারায়ণগঞ্জের লক্ষ্মীনগর গ্রামের পিয়ার আলী ফকিরের ছেলে এবং অভিযুক্ত ঘাতক কামরুল ইসলাম একই গ্রামের হানিফ ফকিরের ছেলে।
নিহতের বোন সোনিয়া আক্তার জানান, নুরুল আমিন ও কামরুল ইসলাম একসঙ্গে সিঙ্গাপুরে ছিলেন। বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুরে লোক নেয়ার ব্যবসা করতেন তারা। কামরুলের কাছে নুরুল আমিন ২৫ লাখ টাকা পেত। এক বছর আগে নরুল সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরে আসে। পাওনা টাকার জন্য কামরুলকে চাপ দিলে সে তালবাহানা করে।
গত ৭ অক্টোবর কামরুল বাংলাদেশে এসে গোপনে তার শ্বশুর বাড়ি মুলাদী অবস্থান নেয়। পাওনা টাকা দেয়ার কথা বলে কামরুল নুরুল আমিনকে মোবাইল ফোনে খবর দিয়ে মুলাদী ডেনে নেয়। গত ১০ অক্টোবর সকালে নুরুল আমিন কামরুলের সাথে দেখা করতে মুলাদী যাওয়ার পর তাকে হত্যা করে হাত পা বেঁধে লাশ নদীতে ফেলে দেয়।
মুলাদীর নাজিরপুর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ প্রবীর মিত্র বলেন, গত ১২ অক্টোবর রাতে আড়িয়াল খাঁ নদীর চর থেকে হাত-পা বাঁধা অজ্ঞাত এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়। আলামত দেখে হত্যার সন্দেহ হয় পুলিশের। এ ঘটনায় নৌপুলিশ বাদী হয়ে মুলাদী থানায় একটি মামলা দায়ের করে। লাশের পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় বেওয়ারিশ হিসেবে বরিশালে তার লাশ দাফন হয়। পরে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার একটি সাধারণ ডায়েরির সূত্র ধরে নুরুল আমিনের মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করে তার পরিবার।
প্রবীর মিত্র আরও জানান, নুরুল আমিন হত্যার দায় স্বীকার করে অভিযুক্ত কামরুলের শ্বশুর খোরশেদ আলম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তিনি উল্লেখ করেন, তার মেয়ে জামাতা কামরুল মোবাইলে নুরুল আমিনকে ডেকে এনে হত্যার পর লাশ নদীতে ফেলে দিয়েছে। পরে সে সিঙ্গাপুর চলে যায়। জবানবন্দি গ্রহণের পর আদালতে তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
অভিযুক্ত কামরুল গত ৭ অক্টোবর বাংলাদেশে এসেছিল এবং ১৩ অক্টোবর সকালে সিঙ্গাপুর চলে যায়। বাংলাদেশে অবস্থানকালে তিনি তার শ্বশুর বাড়ি মুলাদীতে অবস্থান করে বলে পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন