কম খরচে অধিক ফলন, দামও পাওয়া যায় ভালো। তাই সরিষা চাষে কৃষক দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠছে। মাত্র ৮৫ থেকে ৯০ দিনে ফলন ঘরে তুলতে পারায় বোনাস ফসল হিসেবে সরিষা চাষে কিশোরগঞ্জের হাওরে বিপ্লব ঘটেছে। বোরো মৌসুমের আগে হাওরের পতিত জমিতে সরিষা চাষ হচ্ছে।
শুক্রবার দুপুরে কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার পাটাচাপড়া হাওরে বারি সরিষা-১৪ জাতের উৎপাদনশীলতা ও উৎপাদন প্রযুক্তি শীর্ষক মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের তৈলবীজ গবেষণা কেন্দ্রের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ফেরদৌসী বেগম। তিনি বলেন, এক সময় হাওরের এই জমিগুলো বর্ষা মৌসুমের পর বোরো চাষের আগে পতিত থাকতো। সেই পতিত জমিগুলো কীভাবে চাষের আওতায় আনা যায়, সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের তৈলবীজ গবেষণা কেন্দ্র উদ্যোগ নেয়। এর অংশ হিসেবে বারি সরিষা-১৪ চাষে সফলতা আসে। এবার বারি সরিষা-১৪ চাষে হাওরে ভালো ফলন পেয়েছেন কৃষকেরা। এই সরিষা থেকে উৎপাদিত তেল দিয়ে তেলের ঘাটতি কমবে। বিদেশ থেকে আমদানিকৃত সয়াবিন তেলে যে খরচ হয়, সেটা কমে আসবে।
কিশোরগঞ্জ গবেষণা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবার গত বছরের চেয়ে সরিষা চাষ ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে হাওর এলাকায়। এই বারি সরিষা-১৪ চাষে সফলতার মূল লক্ষ্য হলো- পতিত জমিকে তৈলবীজ চাষের আওতায় নিয়ে আসা। এবার যে পরিমাণ জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে, আগামীতে তা আরও বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট সবসময়ই কৃষকদের বীজসহ বিভিন্ন বিষয়ে সহায়তা করে আসছে।
নিকলী সদর ইউনিয়নের ষাইটধার গ্রামের কৃষক মো. ইসরাফিল জানান, এবার ৩০ শতাংশ জমিতে সরিষা চাষ করেছেন তিনি। এই জমিতে অতীতে শুধু ধান চাষ করতেন। এবার কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বিনামূল্যে সরিষা বীজ দিয়েছে। আড়াইমাস পূর্বে এই জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। সরিষা চাষে লাভ বেশি হয় বলেও জানান তিনি।
একই এলাকার কৃষক মফিজ মিয়া জানান, বোরো ধানের আগে পতিত জমিতে ৫০ শতাংশ জমিতে সরিষা চাষ শুরু করেছেন তিনি। এ ফসল চাষে খরচ ও পরিশ্রম কম লাগে। এবার ফলনও ভালো হয়েছে। এছাড়াও সরিষা তেল খাওয়াও স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। আগামীতে আরও অধিক জমিতে সরিষা চাষ করবেন বলে জানান তিনি।
পাঁচরুখী গ্রামের কৃষক আনজু মিয়া জানান, কয়েকদিনের মধ্যেই সরিষার ফসল ঘরে তুলতে পারবেন। সরিষা বিক্রি করে লাভের টাকা বোরো ধান চাষের কাজে ব্যবহার করবেন।
গবেষণা বিভাগের আয়োজনে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের তৈলবীজ গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ সরেজমিনে গবেষণা বিভাগের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ছাড়াও শতাধিক কৃষক উপস্থিত ছিলেন।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল