সাংগ্রাই অর্থাৎ জলোৎসব। মারমা ভাষায় বলা হয় ‘রিলংপোয়ে’। পার্বত্যাঞ্চলের ১০ ভাষাভাষির ১১টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ভিন্ন নামে ভিন্ন আঙ্গিকে পালন করেন বৈসাবিকে। যেমন চাকমারা-বিজু, মারমা-সাংগ্রাইং, ত্রিপুরা-বৈসুক, তঞ্চঙ্গ্যারা-বিষু, আর আহমিয়ারা-বিহু বলেন। ফুলবিজু, মুলবিজু আর প্রহেলা বৈশাখের পর নৃগোষ্ঠীরা এখন মেতেছে জলোৎসবে। এ সাংগ্রাই উৎসবের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে পার্বত্যাঞ্চলে চলা অর্ধমাসব্যাপী বৈসাবি।
রবিবার ছিল রাঙামাটিতে সাংগ্রাই উৎসব। তাই প্রতিবছরের মতো রাঙামাটি রাজস্থলী উপজেলার বাঙালহালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে মারমা সংস্কৃতি সংস্থা (মাসস) আয়োজন করে জলোৎসবের। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার। এসময় রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী, রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান ও জেলা পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ উপস্থিত ছিলেন।
দুপুর সাড়ে ১২টায় কাশিতে ঘণ্টা বাজিয়ে সাংগ্রাই উৎসবের উদ্বোধন করেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার। এরপর শুরু হয় সাংগ্রাই উৎসব। এর আগে তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান থেকে উৎসবস্থলে যোগ দেন হাজারো নারী পুরুষ। কয়েক ঘণ্টায় জনসমুদ্রে পরিণত হয় পুরো উৎসব স্থল।
শুধু মারমা কিংবা রাখাইয়ন সম্প্রদায় নয়, উৎসব উপভোগ করতে আসেন চাকমা, ত্রিপুরা, খিয়াং, গুর্খা, অহমিয়া, তঞ্চঙ্গ্যা, উসুই, লুসাই, চাক, রাখাইন, খুমী, বমসহ বাঙালি জনগোষ্ঠীর নারী-পুরুষ। শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সের মানুষের উপস্থিতিতে মুহূর্তেই জমে ওঠে উৎসবস্থল। সাংগ্রাইকে ঘিরে উৎসবমুখর হয়ে ওঠেছে পাহাড়ি জনপদ। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী-বাঙালিসহ সব ধর্ম, বর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে সম্প্রীতির মিলনমেলা এ জলোৎসবকে ঘিরে।
মারমা সম্প্রদায়ের বিশ্বাস জল হচ্ছে পবিত্র। তাই জল ছিটিয়ে বিগত বছরের গ্লানি মুছে নতুনকে আনন্দে বরণ করলে জীবনে শান্তি স্থায়ীভাবে বিরাজ করবে। তাই নতুন বছরকে বরণ আর পুরোণ বছরকে বিদায় জানাতে তারা সাংগ্রাই উৎসব পালন করে থাকেন। এ উৎসব চলবে আরও সপ্তাহব্যাপী।
বিডি প্রতিদিন/এমআই