শিরোনাম
১৬ মে, ২০২৩ ২০:৪৫

গাজীপুরে স্কুলছাত্রের মৃত্যু নিয়ে রহস্য, পরিবারের দাবি তুলে নিয়ে হত্যা

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি

গাজীপুরে স্কুলছাত্রের মৃত্যু নিয়ে রহস্য, পরিবারের দাবি তুলে নিয়ে হত্যা

প্রতীকী ছবি

গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের রাজেন্দ্রপুরে বৈদ্যুতিক খুঁটির সাথে প্রাইভেট কারের সংঘর্ষে স্কুলছাত্র নিহত হয়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে। তবে কিশোরের পরিবারের অভিযোগ, তার সাথে থাকা বন্ধুরা ওই কিশোরকে হত্যার পর গাড়ি দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দিয়েছে।

সোমবার (১৫ মে) রাতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত মাহফুজ ফরাজি (১৭) জেলার শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের সিঙ্গারদিঘী গ্রামের ফজলুল হক ফরাজির ছেলে। সে স্থানীয় প্লেজ হার্বার ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে “ও লেভেল” পর্যন্ত অধ্যয়নরত ছিল। বর্তমানে সে স্টুডেন্ট ভিসায় কানাডায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের সদর মেট্টো থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আব্দুল্লাহ্ আল রুম্মান বলেন, রাতে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গাড়ি পেলেও আহত কাউকে পাইনি। শুনেছি দুর্ঘটনায় আহতদের মাওনা চৌরাস্তার একটি হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। পরে পুলিশ দুর্ঘটনা কবলিত প্রাইভেট কারকে উদ্ধার করেছে।

নিহত স্কুল ছাত্র মাহফুজের বাবা ফজলুল হক ফরাজি বলেন, সোমবার রাতের খাবার শেষে মাহফুজ ঘরে বসেছিল। একটি প্রাইভেটকারে তৌফিক, তার চালকসহ আরো দু’জন বাড়ির গেটে এসে গাড়িতে হর্ন দেয়। এরপর আমার গাড়ির চালক কাছে গিয়ে জানতে চাইলে মাহফুজকে বাড়ির বাইরে আসতে বলে তৌফিক। পরে মাহফুজ বাড়ির বাইরে আসলে কিছু সময় অপেক্ষা করে সবার অগোচরে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। কিছু সময় ফোন করে অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা মাওনা চৌরাস্তায় আছে বলে জানায়। রাত সাড়ে ১০টায় মাহফুজের মোবাইল ফোন থেকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি দুর্ঘটনা সম্পর্কে তার মাকে জানায়। পরে তারা ঘটনাস্থল রাজেন্দ্রপুরে গিয়ে কাউকে খুঁজে পাইনি। পরে আমরা জানতে পারি মাহফুজকে গুরুতর আহতাবস্থায় তাকে মাওনা চৌরাস্তার আল হেরা হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। সেখান থেকে মাহফুজকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দেন। পরে ময়মনসিংহ থেকে মাহফুজকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

তিনি আরো জানান, সম্প্রতি অভিযুক্ত তৌফিক তার বাড়িতে বেশি আসতো। তাকে নিষেধ করা হলেও সে নিষেধ মানেনি। কোন আক্রোশের কারণে তাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিত ভাবে হত্যার পর দুর্ঘটনার নাটক সাজিয়েছে তৌফিক।

তবে নিহত ও অভিযুক্তের পরিবার জানিয়েছেন, প্রেমঘটিত বিষয়ে নিহত মাহফুজ ও তৌফিসের মধ্যে বিরোধ ছিল। ধারণা করা হচ্ছে প্রেমঘটিত বিষয়েই মাহফুজ হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।

ঘটনার বিষয়ে তৌফিকের বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। বাড়িতে তাকে না পেয়ে যোগাযোগ করা হয় তার বাবা মোফাজ্জল হোসেনের সাথে। তিনি জানান, এঘটনায় আমার ছেলেও আহত হয়েছে। তাকে ঢাকার এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত দুর্ঘটনার বিষয়ে ছেলের সাথে কোন ধরনের কথা বলতে পারিনি। তবে তৌফিকের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা পুরোই মিথ্যা, সাজানো।

মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরী করেছেন রাজধানীর শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক গোলাম হোসেন খান। তিনি মুঠোফোনে জানান, নিহত মাহফুজের কপালের দিকে বড় দুটি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এছাড়াও ঠোঁটেও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। কপাল এবং ঠোঁটের আঘাত দেখে মনে হয়নি এটা সড়ক দুর্ঘটনায় আঘাতের চিহ্ন। আমরা মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেছি। প্রতিবেদন পেলে বিষয়টি সম্পর্কে জানান যাবে।

নিহতের বাবা জানিয়েছেন ঘটনার বিষয়ে শ্রীপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়া হলেও জমা নেয়নি পুলিশ। অভিযোগ জমা না নেয়ার বিষয়ে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম নাসিম বলেন, ভিকটিমের পরিবার থানায় পরামর্শের জন্য এসেছিলেন। এক বন্ধু তো আরেক বন্ধুকে ডেকে নিতেই পারে। যেহেতু একটি ঘটনা ঘটে গিয়েছে আমরা বলে দিয়েছি আপনারা গিয়ে ঘটনাস্থল নির্ধারণ করে পরে আসুন।

এবিষয়ে গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল ইসলাম বলেন, তুলে এনে হত্যা করা হয়েছে এমন ঘটনা জানিয়ে কেউ এখনো থানায় যোগাযোগ করেননি। আমরা দুর্ঘটনার খবরে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিত্যক্ত অবস্থায় একটি প্রাইভেটকার উদ্ধার করে হেফাজতে নিয়েছি। এবিষয়ে কারও কোন অভিযোগ থাকলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান।


বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর