কিশোরগঞ্জে গলা কেটে হত্যার ২৫ দিন পর মুখলেছ ভূঁইয়া (২৫) নামে এক ছাত্রলীগ নেতার মাথাবিহীন গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার আসামি মিজান শেখের দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী মঙ্গলবার বিকালে কিশোরগঞ্জ শহরের গুরুদয়াল সরকারি কলেজ সংলগ্ন নরসুন্দা নদী থেকে তার গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এর আগে, মুখলেছের পরিহিত লুঙ্গি, বাসার চাবি ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছোরা উদ্ধার করা হয়। লাশ উদ্ধার হলেও এখন পর্যন্ত মাথা পাওয়া যায়নি।
মুখলেছ কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার কেওয়ারজোড় ইউনিয়নের ফুলপুর গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে এবং কেওয়ারজোড় ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল সরকারি কলেজ থেকে সম্প্রতি বাংলায় স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। পড়ালেখা শেষ করে কিছুদিন আগে থেকে কিশোরগঞ্জ আদালতে পেশকারের সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
আসামি মিজানের দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদলের সহায়তায় দু’দিন ধরে কিশোরগঞ্জ শহরের নরসুন্দা নদীতে উদ্ধার অভিযান চালানো হয়। সোমবার সারাদিন নদীতে ডুবুরি নামিয়ে তৎপরতা চালালেও লাশের সন্ধান পায়নি। মঙ্গলবার বিকালে নদীর কচুরিপানার ভেতর থেকে শরীরে সিমেন্টের ব্লক বাঁধা অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখসহ পুলিশের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
মুখলেছের বড় ভাই মিজানুর রহমান জানান, গত ২৯ মার্চ পাগলা মসজিদে তারাবির নামাজ পড়ে ফেরার পথে নিখোঁজ হয় সে। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও না পেয়ে ৩১ মার্চ সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। এদিকে নিখোঁজের সময়ের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজে মোখলেছকে তার বন্ধু মিজান শেখের সঙ্গে দেখা গেছে বলেও জানান তিনি। মিজানের বাড়িও মিঠামইনের ফুলপুর গ্রামে।
তিনি আরও জানান, আসামি মিজান প্রায় এক বছর আগে মুখলেছের কাছ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিল। তাছাড়া বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে মামলাও চলে আসছে। এসব বিষয় নিয়েই মিজান মুখলেছকে হত্যা করে থাকতে পারে বলে তার ধারণা।
পুলিশ এ ঘটনায় গত শনিবার সিলেটের শায়েস্তাগঞ্জ থেকে চারজনকে আটক করে। তারা হলেন-মুখলেছের বন্ধু মিঠামইনের ফুলপুর গ্রামের মিজান শেখ (২৮), তার দুই ভাই মারজান শেখ (২৬), রায়হান শেখ (২১) ও তাদের বাবা সেফুল শেখ (৬৫)। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মুখলেছকে হত্যার কথা স্বীকার করে লাশ নরসুন্দা নদীতে ফেলে দেওয়ার কথা জানায় মিজান। পরে মিজানকে নিয়ে তার দেখানো স্থানে তল্লাশি চালিয়ে লাশ উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ জানান, ২৯ মার্চ রাতে মুখলেছকে হত্যা করে শরীরে ব্লক বেঁধে ব্রিজের নিচে নরসুন্দা নদীতে ফেলে দেয়। মুখলেছ নিখোঁজ হওয়ার পর ৩১ মার্চ থানায় জিডি এবং ১৬ এপ্রিল অপহরণ মামলা করা হয়। পরে সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে সিলেট থেকে মিজানকে গ্রেফতার করা হয়। যে ছোরা দিয়ে গলা কাটা হয়েছে, সেই ছোরাটিও উদ্ধার করা হয়েছে। ছোরাটি ২৩০ টাকা দিয়ে যার কাছ থেকে কিনেছে তিনিও স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। যাদের নিয়ে হত্যাকাণ্ড সম্পন্ন করেছেন মিজান তাদের বিষয়েও তথ্য দিয়েছেন উল্লেখ করে পুলিশ সুপার জানান, এসব পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। লাশ বিকৃত হওয়ায় অধিকতর নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডিএনএ পরীক্ষার কথাও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
বিডি প্রতিদিন/এমআই