এবার আষাঢ় ভিন্ন রুপে হাজির হয়েছে রংপুরে । আষাঢ় মাস সাধারণত মেঘের ঘনঘটা- বৃষ্টির রিমঝিম শব্দে মুখর থাকলেও এবারের চিত্র একেবারে ভিন্ন। কোথাও ছিটেফোটা নেই। রবিবার সকালে কিছুটা মেঘের ভেলা ভেসে বেড়ালেও রংপুরের কোথাও বৃষ্টির দেখা নেই আষাঢ়ের প্রথম দিনে। এক পশলা বৃষ্টির জন্য চাতক পাখির মত চেয়ে আছে মানুষ।
একেতো বৃষ্টি নেই। তার ওপর কাঠফাটা গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এদিকে আষাঢের প্রথম দিনে প্রকৃতিতে দোল খাচ্ছে কদম ফুল। বর্ষা এলে গাছে গাছে এই ফুলের সমারোহ দেখা যাওয়ায় অনেকে এটিকে বাদল দিনের ফুল বলেন।
কবি-সাহিত্যিকরা বর্ষা এলেই কদম ফুলের বন্দনা গীতে কাব্য রচেন। এক সময় বাজার মূল্য না থাকায় শুধু জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হত এই কদমগাছ। জন্মও হত প্রাকৃতিকভাবে। বর্তমানে কদমের সুদিন ফিরে আসতে শুরু করেছে। যান্ত্রীকতার ছোঁয়ায় তৈরী হচ্ছে পারটেক্স। আসবাব তৈরী ও ঘর সাজাতে এই পারটেক্স তৈরীর অন্যতম উপদান হচ্ছে কদম কাঠ। তাই দিন দিন এর চাহিদা ও বাজারমূল্য বাড়ছে। প্রাকৃতির ওপর নির্ভর না করে অনেক নার্সারিতেই এখন কমদগাছের চারা পাওয়া যাচ্ছে। নগরীর কারমাইকেল কলেজ ক্যাম্পাসসহ বেশকয়টি এলাকায় কদমগাছ ও ফুলের শোভা দেখা গেছে। তবে অনেক গাছের কদমফুল এখনো পরিপক্ক হয়নি।
বাংলা একাডেমির সহপরিচালক এবং বেগম রোকেয়ার স্মৃতিকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবিদ করিম মুন্না কদম প্রসঙ্গে বলেন, দীর্ঘাকৃতি, বহুশাখাবিশিষ্ট বিশাল বৃক্ষ বিশেষ এবং এর ফুল। রূপসী তরুর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কদম। কদমের কাণ্ড সরল, উন্নত, ধূসর থেকে প্রায় কালো এবং বহু ফাটলে রুক্ষ, কর্কশ। শাখা অজস্র এবং ভূমির সমান্তরালে প্রসারিত। বড় বড় পাতা হয়। কদম ফুল দেখতে বলের মতো গোল, মাংসল পুষ্পাধারে অজস্র সরু সরু ফুলের বিকীর্ণ বিন্যাস। পূর্ণ প্রস্ফুটিত মঞ্জরির রঙ সাদা-হলুদে মেশানো হলেও হলুদ-সাদার আধিক্যে প্রচ্ছন্ন। প্রতিটি ফুল খুবই ছোট, বৃতি সাদা, দল হলুদ, পরাগচক্র সাদা এবং বহির্মুখীন, গর্ভদন্ড দীর্ঘ। ফল মাংসল, টক । এই ফল কাঠ বিড়ালী ও বাদুড়ের প্রিয় খাদ্য। ওরাই এর বীজ বহন করে প্রকৃতিতে ছড়িয়ে দেয়। সেই বীজ থেকে এক সময় চারা গজায়। চারা থেকে গাছ, ফুল ও ফল। কদম গাছ খুব নরম হওয়ায় এর কোন অংশ দিয়ে আসবাবপত্র তৈরী করা যেত না। ফলে এই গাছটির বাণিজ্যিক কোন চাহিদা ছিল না। এছাড়া গাছটি বংশ বিস্তার হত পাখির মাধ্যমে। পাখিরা এর বীজ ভক্ষণ করে তা মল আকারে প্রকৃতিতে ছড়িয়ে দিত। চাহিদা না থাকায় গাছটি হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হলেও বর্তমানে এই গাছটি ব্যবহার হচ্ছে পারটেক্স তৈরীতে। ফলে প্রকৃতির ওপর নির্ভর না করে অনেক নার্সারি মালিক কদমের চারা তৈরী করে বাজারজাত করছেন।
এছাড়া বন বিভাগও হারিয়ে যাওয়ার পথে এই কদমগাছ রক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন বলে জানালেন রংপুর বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন। তিনি জানান, পারটেক্সে কদমের ব্যবহার শুরু হওয়ায় এর বাজারমূল্য আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়েছে। তাই সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে এই গাছের উৎপাদন বাড়ছে।
এদিকে আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানাগেছে, জুন মাসে নরমাল বৃষ্টিপাত হয় ৫০০ মিলিমিটারের ওপর। সেখানে জুনের ১৫ তারিখ পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ১২৯ দশমিক ১ মিলিমিটার। সব মিলিয়ে দেখা গেছে বাংলা মাসের আষাঢ়ের প্রথম দিন কেটেছে বৃষ্টিহীন। আবহাওয়াবিদদের মতে আষাঢ়ে এমন আবাহাওয়া গত ৩ দশকেও দেখা যায়নি। অথচ আষাঢ়- শ্রাবণ এই দুইমাস বর্ষাকাল। আষাঢ় মাসে আগে একটানা কয়েকদিন বৃষ্টি হত। কিন্তু জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে আষাঢ়ের বৃষ্টি হারিয়ে এখন হয়েছে অতিতের স্মৃতি। সর্বোচ্চ তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসে।
রংপুর অফিসের আবহওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান বলেন, বৃষ্টির পূবাভাস রয়েছে। খুব দ্রুতই বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল