বগুড়ার শেরপুর উপজেলার চককল্যাণী গ্রামে কাটখালী বাঁধ ভেঙে ভোগান্তিতে পড়েছেন ১২ গ্রামের মানুষ। বাঁধের প্রায় ৫০ ফুট পানির স্রোতে ভেসে গেছে। এতে করে উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নের চকধলী, চককল্যাণী, কল্যাণী, জয়নগর, জয়লাজুয়ান, বেলগাছি, জোড়গাছা ও আউলাকান্দির সঙ্গে ধুনট উপজেলার পেঁচিবাড়ি, জালশুকা, বিশ্বহরিগাছা ও ভুবনগাতি গ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। পাশাপাশি সড়কের পাশের গাছপালা ও দোকানঘর ভেসে গেছে। বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় চককল্যাণীসহ আশপাশের গ্রামের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। দুর্ভোগে পড়েছেন শেরপুর ও ধুনট উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ।
এদিকে, ধসে যাওয়া বাঁধের স্থানটিতে স্থায়ীভাবে একটি স্লুইচগেট নির্মাণ করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, গত ১৭ থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত বাঁধের দক্ষিণ পাশের ফসলি জমির জলাবদ্ধতা নিষ্কাশনের জন্য বাঁধের মধ্যে প্লাস্টিকের পাইপ বসানো হয়। গত ২৪ জুলাই সন্ধ্যায় ওই পাইপ দিয়ে পানি প্রবাহ শুরু হলে বাঁধটি ধসে পড়ে। অপরিকল্পিতভাবে এই পাইপ বসানোর কারণেই এই বাঁধে ধস দেখা দিয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে কাজ শুরু হলে বর্ষায় বাঁধটি ধসে যেত না। এদিকে কাটাখালী বাঁধে একটি স্লুইচগেট নির্মাণের জন্য সম্প্রতি মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। পাশাপাশি বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়।
এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে একটি টেকসই স্লুইচগেট নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। যাতে করে বর্ষায় নদীর পানি এই খালে প্রবেশ করতে না পারে। বৃষ্টির অতিরিক্ত পানি নদীতে নেমে যেতে পারে।
এলাকাবাসীর দাবি, বাঁধের দ্রত পুনর্নির্মাণ এবং টেকসই স্লুইচগেট স্থাপন ছাড়া এই দুর্যোগের স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। এখানে দ্রুত সমস্যা সমাধান করে স্বাভাবিক চলাচল ও নির্বিঘ্নে বসবাসের ব্যবস্থা করতে হবে।
উপজেলার চককল্যাণী গ্রামের কাশেম মিয়া জানান, একটা সময় ছিল যখন বগুড়ার শেরপুর ও ধুনট উপজেলার বিলজয় সাগর, জয়লা জুয়ান, আওলাকান্দি, জালশুকা, কইগাতী, যুগিগতি, রুদ্রবাড়িয়াসহ আশপাশের এলাকার মানুষ বন্যার হাত থেকে তাদের ফসল রক্ষা করতে পারতেন না। কারণ শেরপুর উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নের চককল্যাণী গ্রামের কাটাখালী খাল দিয়ে বন্যার পানি ঢুকে ফসল তলিয়ে যেত। পরে বন্যার হাত থেকে ফসল রক্ষায় ওই এলাকায় নব্বইয়ের দশকে ধুনট উপজেলা পেচিবাড়ি থেকে শেরপুর উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নের চককল্যাণী গ্রামে কাটাখালী বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এতে করে শেরপুর ও ধুনট উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকার ফসল বন্যার হাত থেকে রক্ষা পায়। কিন্তু সম্প্রতি বাঁধটির সংস্কার কাজ করা হলেও আবারো ধসে যায়।
তিনি আরও বলেন, বাঁধ সংস্কারের সময় অপরিকল্পিতভাবে প্লাস্টিকের পাইপ বসানো হয়েছিল। ওই পাইপ দিয়ে দক্ষিণ পাশে পানি প্রবাহিত হওয়ার সময় বাঁধটি ধসে পড়ে। এতে করে ১২ গ্রামের মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন।
শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশিক খান জানান, বাঁধ ভাঙনের খবর পাওয়ার সাথে সাথে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ইতিমধ্যে পরিদর্শন করেছেন।
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক জানান, শেরপুর উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নের কাটাখালী বাঁধের ভাঙনস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। বাঁধটি যেহেতু খালের মুখে, তাই ভাঙনস্থল বন্ধ করে সুফল পাওয়া যাবে না। এলাকার মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে এটি স্থায়ীভাবে সমাধান করতে হবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই