আমরা এখনও স্বপদে বহাল রয়েছি, আমাদের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বহাল রয়েছেন। ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীর নিয়োগ সম্পূর্ণ অবৈধ বলে উল্লেখ করেছেন ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এমন দাবি করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের কর্তৃক বহিষ্কৃত এই নেতা।
এর আগে গতকাল সোমবার (৭ জুলাই) তাকে এবং পার্টির মহাসচিবসহ তিন শীর্ষনেতাকে দলের সকল পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
জিএম কাদের কর্তৃক অব্যাহতি প্রদানের একদিনের মাথায় সংবাদ সম্মেলন ডেকে এমন দাবি করেছেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। যে প্রেসিডিয়ামের সভার রেফারেন্স দিয়েছেন জিএম কাদের সেই বৈঠককেও অস্বীকার করেছেন তিনি।
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ওই প্রেসিডিয়ামের সভায় কোরাম হয়নি। আর গঠনতন্ত্রের ২০/৩(খ) ধারায় বলা হয়েছে মহাসচিব চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করে, প্রেসিডিয়ামের মিটিং আহ্বান করবেন। আলোচন্য সূচি নির্ধারণ করবেন মহাসচিব। পার্টির চেয়ারম্যান মিটিং ডাকার এখতিয়ার রাখেন না। সম্মেলন ঘোষণার পর পার্টির কোনো পদে পরিবর্তন-পরিবর্ধন করতে পারবেন না।
তিনি বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে আমরা গঠনতন্ত্র বিরোধী কাজ করেছি। আমরা পার্টির বিরুদ্ধে কি কাজ করেছি। আমরা বিবৃতি দিয়ে বলেছি ২০ (ক) ধারা বাতিল করতে বলেছি, হিসাবের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এবং বৃহত্তর ঐক্যের কথা বলেছি। আমাদের এসব কাজ কোনোভাবেই দলের গঠনতন্ত্র বিরোধী কাজ হিসেবে গণ্য হতে পারে না।
তিনি বলেন, বিগত নির্বাচনে আড়াই কোটি টাকার মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। সেই টাকার কোনো হিসাব দেননি। পার্টির চাঁদা এবং অনুদানের কোনো হিসাব দেননি। আমরা তার কাছে এসবের হিসাব চেয়েছি। এটাতো গঠনতন্ত্র বিরোধী হতে পারে না।
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ অবিলম্বে কাউন্সিলের মাধ্যমে পার্টির সকল সমস্যা সমাধান করার দাবি জানিয়েছেন সংবাদ সম্মেলনে।
তিনি বলেন, আমরা প্রায় সকলেই প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, প্রতিষ্ঠাকালীন থেকে দলের সঙ্গে রয়েছি। আমিও এই পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছিলাম, আমাকে যখন ঘোষণা করা হয়, তখন পার্টির চেয়ারম্যান আমার পাশে বসে ঘোষণা দিয়েছিলেন। আর জিএম কাদের জোর করে স্বাক্ষর নিয়েছেন। একজন মৃত্যু পথযাত্রী ছিলেন। ঠিক যেভাবে মিলিটারি ক্যু হয় সেভাবে করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং কাউন্সিলের মাধ্যমে সকল সমস্যা সমাধানের দাবি জানান তিনি।
জাতীয় পার্টি ছোট হতে হতে এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে বলে মন্তব্য করেছেন কাজী ফিরোজ রশীদ। তিনি বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ হলে জাতীয় পার্টি আগামী দিনে অনেক ভালো করতে পারবে।
তিনি বলেন, জিএম কাদের একে একে সবাইকে বের করে দিয়েছেন। আমরা সবাই চাই একটি ঐক্যবদ্ধ জাতীয় পার্টি।
পার্টির প্রাথমিক সদস্যপদ কেড়ে নেওয়ায় আক্ষেপ করে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আমি এমন কি অপরাধ করলাম, যার জন্য পার্টির প্রাথমিক সদস্যপদ পর্যন্ত অব্যাহতি দিলেন!
চুন্নু আরও বলেছেন, আমাকে পার্টির মহাসচিব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে কোনো আপত্তি নেই। আমার একটাই দুঃখ ’৮৬ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়। ১৯৮৭ সালে উপমন্ত্রী হয়েছি, তখন থেকে পার্টির সঙ্গে আছি। আমি যখন মন্ত্রী তখন জিএম কাদের একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের ডেপুটি ম্যানেজার। তিনি ১৯৯৬ সালে পার্টির সদস্যপদ গ্রহণ করেন। তার কোনো যোগ্যতা নেই, তার একমাত্র যোগ্যতা হচ্ছে তিনি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ভাই। তারপরও তাকে নেতা মেনে রাজনীতি করেছি। ২৮ জন নেতাকে প্রমোশন দিয়েছেন, আমি জানি না।
তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের ২০/১(ক) ধারার মতো আর কোনো রাজনৈতিক দলে ধারা নেই। তাই আমি বললাম এই ধারা পরিবর্তন করা দরকার। এই ধারায় তাকেও (জিএম কাদের) দুই দফায় জাতীয় পার্টি থেকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাইদুর রহমান টেপা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, এটি ইউ তাজ রহমান, সোলায়মান আলম শেঠ, নাসরিন জাহান রতনা, নাজমা আক্তার, জহিরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ, মাসরুর মওলা, জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া, মো. আরিফুর রহমান খান।
চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা সরদার শাহজাহান, মো. হারুন আর রশিদ, ভাইস-চেয়ারম্যান আমানত হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, যুগ্ম মহাসচিব মো. বেলাল হোসেন, ফখরুল আহসান শাহজাদা, দফতর সম্পাদক এম এ রাজ্জাক খান, যুগ্ম সম্পাদক শারমিন পারভীন লিজা, ডা. সেলিমা খান প্রমুখ।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত