শুক্রবার, ২ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা
গল্প

পাখির চোখে বাংলাদেশ

আমিরুল ইসলাম

পাখির চোখে বাংলাদেশ

এক দিন আমি একটা প্লেন কিনব। প্লেনে চড়ে আমি নাটোর যাব। নাটোরের জমিদার বাড়িতে আমার প্লেন নামবে। চারপাশে পাখিরা কিচকিচ করবে। নাটোরের জমিদার বাড়িটা খুব সুন্দর। বিশাল জায়গাজুড়ে এই বাড়ি। বাড়ির ভিতরে বিশাল এক পুকুর। পুকুরে পদ্মফুল। আমি সেই পুকুরে নামব। সাঁতার কাটব। তারপর আমার প্লেন নিয়ে আবার উড়াল দেব। এবার যাব বগুড়ার মহাস্থানগড়। প্রাচীন স্থাপনা। এখানে একদা পাঠশালা ছিল। বৌদ্ধ ধর্মের ওপর লেখাপড়া হতো। এখানে তার ধ্বংসাবশেষ আছে।

প্লেনে করে যাব সাভার স্মৃতিসৌধ।

১৯৭১-এ মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিয়েছে যে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের স্মরণে এই সৌধ।

খুব সুন্দর স্থান। বিশাল খোলা চত্বর। পেছনে অতিসুন্দর ভাস্কর্য। দেখলেই মনটা বড় হয়ে যায়। একাত্তরের কথা মনে পড়ে। মুক্তিযোদ্ধাদের কথা মনে পড়ে।

তারপর প্লেনে চড়ে পাখিদের সঙ্গে উড়ে উড়ে চলে যাব রাজশাহীতে। সোনা মসজিদে। পুরনো মসজিদ।

চট্টগ্রামে ওয়ার সিমেট্রিতে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত শহীদ স্মরণে একটা সমাধি সৌধ।

তারপর প্লেন এসে নামবে লালবাগ কেল্লায়। ঢাকায় যখন মোগলরা আসে তখনই লালবাগ দুর্গ স্থাপিত হয়।

বাংলাদেশে সমুদ্রে তখন ভিনদেশি দস্যুদের আগমন। তাদের প্রতিরোধ করতেই লালবাগ দুর্গ। এ দুর্গকে কেন্দ্র করেই ঢাকা শহর জমজমাট হয়ে ওঠে। ঢাকা তৈরি হয়েছিল।

ঢাকেশ্বরী মন্দিরকে কেন্দ্র করে। বলা হয়, মন্দিরে ঢাক বাজানো হয়। সেই ঢাকের শব্দ যে পর্যন্ত শোনা যায় সেই পর্যন্ত ঢাকা শহর।

এখন প্লেন নিয়ে আমি কোথায় যাব? প্লেনে উঠলাম। চারপাশে পাখির দল। আমার প্লেন যাচ্ছে বুড়িগঙ্গা পেরিয়ে। মেঘনা পার হলো। তারপর ঘুরল। যমুনার ব্রিজের সামনে প্লেনটা থামল।

এ ব্রিজ তৈরি হয়ে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হয়ে গেছে। কী বিশাল ও দীর্ঘ ব্রিজ। সাগরে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে।

ব্রিজের পাশে কিছুক্ষণ বসে রইলাম। একটা ট্রেন চলে গেল ব্রিজের পাশ দিয়ে। বাস-ট্রাক একের পর এক যাচ্ছে।

আমার ছোট্ট পাখির মতো প্লেনটা দাঁড়িয়ে আছে। বাংলাদেশ ঘুরে বেড়াতে ওর ভারি পছন্দ। কি ভাই, কেমন লাগছে খুবই ভালো।

পড়াশোনা হতো। ঘুরে ঘুরে ময়নামতি দেখলাম। চমৎকার জায়গা। প্লেনটা যখন নামছিল তখন অদ্ভুত সুন্দর দেখছিল ময়নামতি। আমি পাখির চোখ দিয়ে দেখছিলাম। ময়নামতি দেখা শেষে গেলাম সুন্দরবন। হিরন পয়েন্টের একটা খোলা জায়গায় আমাদের প্লেনটা নামল।

এরপর কোথায় যাবে বন্ধু?

তুমি যেখানে নিয়ে যাবে।

তাহলে চলো, লালমাই ময়নামতি। কুমিল্লায়।

চলো।

একটানে উড়ে আমরা ময়নামতি এলাম। এটি একটা বৌদ্ধ বিহার। এখানেও এক দিন ছাত্র-শিক্ষকের কলরব ছিল।

দূরে কটকা সাগর তীর। রুপালি নদী বয়ে যাচ্ছে। নদী একেবারে শান্ত। অরণ্য আরও নীরব। পাতা ঝরার শব্দ পর্যন্ত শোনা যায়। এমন আশ্চর্য নীরবতা বাংলাদেশের কোথাও নেই।

সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দেখা পাইনি। ওরা নাকি রাতে বের হয়।

দিনে কোথাও ঘুমায়। সুন্দরবন থেকে চলে গেলাম বান্দরবান। পার্বত্য এলাকা। বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি এসব সুন্দর পাহাড়ি এলাকা। আকাশ আর মেঘ সেখানে এক হয়ে গেছে। দারুণ ভালো লাগছে মন ভরে গেল।

আর কোথায় যাব পুরো বাংলাদেশটা তন্ন তন্ন করে ঘুরে দেখতে হবে। বড় সুন্দর দেশ। বড় সরল এদেশের মানুষরা।

বাংলাদেশ, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর