মহাবিশ্বের দিকে তাকালে সহজ প্রশ্নগুলোও কখনো কখনো গভীরতম রহস্যের দুয়ার খুলে দেয়। বিজ্ঞানী ও দার্শনিকেরা বিশ্বাস করেন, প্রাণের বিকাশ কোনো দুর্ঘটনা নয় বরং মহাবিশ্বের গঠনতন্ত্রের গভীরে লুকিয়ে আছে এ প্রশ্নের উত্তর।
মহাবিশ্বের কাঠামো যেন প্রাণের বিকাশের উপযোগী একটি ভারসাম্যপূর্ণ পরিসর তৈরি করেছে। নিউট্রনের ভর, ইলেকট্রনের চার্জ বা মহাকর্ষ বলের শক্তির মতো যেসব মৌলিক ভৌত ধ্রুবক রয়েছে, তাদের মান এতটাই নিখুঁতভাবে নির্ধারিত যে তাতেই প্রাণের টিকে থাকা সম্ভব হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরামর্শক লুক বার্নস এই প্রসঙ্গে বলেন, মহাবিশ্বের ধ্রুবকগুলোর মাত্রা সামান্য পরিবর্তন হলেই পরমাণু অস্থিতিশীল হয়ে পড়ত, ফলে প্রাণের বিকাশ তো দূরের কথা, মৌলিক বস্তুগত কাঠামোই গড়ে উঠত না।
এই প্রসঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ তাত্ত্বিক ধারণা হলো নৃতাত্ত্বিক নীতি (Anthropic Principle)। এই ধারণা অনুযায়ী, মহাবিশ্বের মৌলিক ধ্রুবকগুলো এমনভাবে বিন্যস্ত যে তা প্রাণের অস্তিত্বকে সম্ভব করে তুলেছে। এই নীতির প্রথম সূত্র বলছে, যেহেতু আমরা এখন এখানে আছি এবং জীবন বিদ্যমান, তাই নিশ্চয়ই মহাবিশ্বের এই ধ্রুবকসমূহের মান এমনভাবে রয়েছে যে তারা অন্তত এই স্থানে প্রাণ বিকাশের সুযোগ করে দিয়েছে। আর দ্বিতীয় সূত্রটি বলছে, এই ধ্রুবকসমূহের মান এমনই হতে হয় যাতে তারা প্রাণের বিকাশের জন্য উপযোগী হয়ে ওঠে।
জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ ও অধ্যাপক শন ক্যারলও এই বিষয়টি তুলে ধরেছেন। তার মতে, মহাবিশ্ব সার্বিকভাবে একই রকম নয়, বরং অঞ্চলভেদে বৈচিত্র্যময়। ফলে এমন কোনো এক অঞ্চলে আমাদের অবস্থান হওয়াটা স্বাভাবিক, যেখানে প্রাণের বিকাশের জন্য প্রাসঙ্গিক শর্তগুলো অনুকূল ছিল।
সার্বিকভাবে বলা যায়, প্রাণের বিকাশ শুধু জীববিজ্ঞানের বিষয় নয়, বরং এটি মহাবিশ্বের ভৌত বাস্তবতার গভীরে প্রোথিত এক রহস্য, যা এখনো বিজ্ঞানীদের বিস্ময় জাগিয়ে যাচ্ছে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল