ইফতার শব্দটি আরবি। যার শাব্দিক অর্থ ভঙ্গ করা, তরক করা, ত্যাগ করা ইত্যাদি। পারিভাষিক দৃষ্টিকোণ থেকে ইফতার বলা হয় সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহর নির্দেশ পালনার্থে পানাহার, জৈবিক চাহিদামুক্ত থাকার পর সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে পানাহার করাকে ইফতার বলে। সূর্য অস্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা উত্তম। ইফতারে বিলম্ব না করা ভালো। হজরত ওমর ইবনে খাত্তার (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন রাত এখান থেকে আগমন করে ও দিন এখান থেকে পশ্চাৎগমন করে এবং সূর্যাস্ত যায় তাহলেই রোজা পালনকারীর ইফতার হলো। (বুখারি মুসলিম) অন্য এক হাদিসে বলা হয়েছে এবং সূর্য অদৃশ্য হলে, তাহলে তুমি ইফতার করবে। (তিরমিজি আহমাদ, দারিমি) ইফতার মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে রোজাদারের জন্য অশেষ নিয়ামত। রোজাদার বান্দা যখন ইফতারের আগ মুহূর্তে ইফতার সামগ্রী সামনে নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে- নির্দিষ্ট সময়ের আগে কোনো কিছু মুখে দেয় না, তখন আল্লাহতায়ালা বান্দার এ তাকওয়া দেখে অত্যন্ত খুশি হয়। মহানবী (সা.) বলেন, তোমরা যখন ইফতার কর, তখন খেজুর দ্বারা ইফতার কর। কারণ এর মধ্যে বরকত আছে। আর যদি খেজুর না পাও তবে পানি দ্বারা ইফতার কর। কেননা পানি পবিত্র। (আবু দাউদ, তিরমিজি) রোজাদার ব্যক্তিকে ইফতার করানোর ফজিলত অনেক। এ সম্পর্কে রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'যে ব্যক্তি রমজান মাসে কোনো রোজাদার ব্যক্তিকে ইফতার করায় সেটা তার গুনাহ মোচন করে এবং দোজখের আগুন থেকে রোজাদারের মুক্তির কারণ হয়'। অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে 'যে ব্যক্তি রোজাদারকে কিছু খেঁজুর বা সামান্য পানির শরবত কিংবা এক ঢোক দুধ দ্বারা ইফতার করায় তা তার জন্য ক্ষমার কারণ হয়। এ রমজান মাসের প্রথমভাগ আল্লাহর রহমত, মধ্যভাগে গুনাহ মোচন এবং শেষভাগে জাহান্নাম থেকে মুক্তি বিদ্যমান'। (মুসনাদে জামিয়া) হজরত জায়েদ ইবনে খালেদ জুহানি (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রসুল (সা.) বলেছেন, 'যে রোজাদারকে ইফতার করাল, তার রোজাদারের ন্যায় সোয়াব হবে, তবে রোজাদারের নেকি বিন্দুমাত্র কম হবে না'। (তিরমিজি, ইবনে নাজাহ, নাসায়ি ফিল কুবরা) রোজাদারকে ইফতার করালে তার প্রতিদান আল্লাহ নিজের পক্ষ থেকে প্রদান করেন। রোজাদারের পক্ষ থেকে এটা আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহের আলামত। (ফায়জুল কাদির) মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের রোজার পরিপূর্ণ হক আদায় করে যাতে ইফতারের পূর্ণ ফজিলত অর্জন করতে পারি তার তৌফিক দিন।
লেখক : গবেষক প্রাবন্ধিক।